শিরোনাম

বিশেষ ট্রেন, জমেছে আমের বাজার

ছবি:সংগৃহীত

সজীব আহমেদ:

করোনাভাইরাস মহামারিতে জ্যৈষ্ঠের মিষ্টিমধুর আম সঠিকভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হবে, নাকি গাছেই পচবে—এমন শঙ্কায় ছিলেন আম চাষিরা। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে আম রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়াটাও ছিল তাঁদের শঙ্কার আরেক কারণ। অবশেষে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সিদ্ধান্ত তাঁদের দুশ্চিন্তামুক্ত করেছে। তবে ট্রেনে আম পরিবহনে ভোগান্তির উল্লেখ করে অসন্তোষ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশে উৎপাদিত আমের বড় অংশই ফলে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে। করোনা পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের আম বাজারজাতকরণে সুবিধার লক্ষ্যে গত শুক্রবার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে প্রথমবারের মতো সরকার চালু করেছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ সার্ভিস। এই বিশেষ সেবা চালু হওয়ায় জমে উঠেছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের বাজারগুলো। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা বাজারগুলোতে ভিড় করছেন। অনেক ব্যবসায়ী বাগান বুকিং দিয়ে রাখছেন।

রেল বিভাগ বলছে, ‘চাহিদা বজায় থাকলে কেবল আমের মৌসুম নয়, স্থায়ীভাবেই এই বিশেষ সার্ভিস চালু রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’

এদিকে সহজে বাজারজাত করার সুযোগ তৈরি হওয়ায় আম চাষিরা খুশি হলেও ব্যবসায়ীরা ততটা উত্ফুল্ল হতে পারেননি। তাঁরা বলছেন, ট্রেনে খরচ কম হলেও ট্রাকের বদলে ট্রেনে আমের মতো পণ্য পরিবহনে রয়েছে নানা ঝামেলা। স্টেশনে আম নেওয়া, উঠানো-নামানো, স্টেশনে কুলি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য সামলাতে হচ্ছে। তা ছাড়া বারবার উঠানো-নামানোর ফলে আমের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।

আম চাষিরা বলছেন, ‘করোনা মহামারির কারণে বাজারজাতকরণ নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। প্রতিবছর আমের আড়তগুলোতে ব্যাপারীদের যে ভিড় থাকে এবার তা ছিল না। এ অবস্থায় সব আম বিক্রি হবে কি না এবং ন্যায্য মূল্য মিলবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় আমরা খুশি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষি আক্তার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ট্রেন সার্ভিসটি চালু হওয়ায় আম বাজারজাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হলো। এখন ঢাকা থেকে প্রচুর ব্যবসায়ী আসছেন। অনেক ব্যবসায়ী আবার নিজে না এসে ফোনে আমের অর্ডার দিচ্ছেন।’

আম চাষি ও রাজশাহীর অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আম কিনছেন। রাজশাহীর বানেশ্বর, কামারপাড়া ও সাহেববাজার জমে উঠেছে।’

রাজশাহীর আম ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন বলেন, ‘বিশেষ ট্রেন চালু হওয়ায় আমের ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। কারণ একটি ট্রাকে ১৫-১৬ টন আম ধরে, যা ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ট্রাকে ও ট্রেনে সহজে ঢাকায় আম পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় রাজশাহীর বাজারগুলোতে ব্যবসায়ীর ভিড় বাড়ছে।’

ঢাকার আদর্শ ফল ভাণ্ডারের ব্যবসায়ী মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘সরকার আমের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করায় ব্যবসায়ী ও চাষিদের জন্য ভালো হয়েছে। তবে ট্রেনে আম বহনে কিছু সমস্যার মধ্যেও পড়তে হচ্ছে। আম কিনে আলাদা গাড়ি দিয়ে স্টেশনে নিয়ে যেতে হয়। বারবার উঠানো-নামানো হয় বলে আমের গুণগত মান ঠিক থাকছে না। আবার স্টেশনে কুলি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যও সামলাতে হয়। এ অবস্থায় ট্রেনে আম বহনে অনেক ব্যবসায়ীরই আগ্রহ কম।’

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আম বাজারজাতকরণের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করায় এখন আম চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাবেন এবং ভোক্তারাও অপক্ষোকৃত কম দামে আম কিনতে পারবেন।’

সূত্র:কালের কন্ঠ, ১০ জুন, ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.