মো. আমিরুজ্জামান:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একমাত্র সেতু কারখানা জনবলসংকট ও জরাজীর্ণতার কারণে বেহাল হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। সেতু কারখানাটি থেকে রেলওয়ের সর্ববৃহত্ হার্ডিঞ্জ সেতুসহ প্রায় ২ হাজার সেতু, কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৮৭০ সালে তত্কালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানাটি গড়ে ওঠে। এর পাশেই একই সময় প্রায় ১৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় গুরুত্বপূর্ণ সেতু কারখানাটি (ব্রিজ ওয়ার্কশপ)। এর উদ্দেশ্য হলো সারাদেশের রেলপথে যেসব ব্রিজ, কালভার্ট রয়েছে তার উপকরণ, নির্মাণ ও স্থাপন এবং সরবরাহকরণ। এই সেতু কারখানাটির মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চল প্রায় ২ হাজার সেতু-কালভার্ট মেরামত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাবনার পাকশীতে অবস্থিত রেলওয়ে স্থাপনা হার্ডিঞ্জ সেতু ও লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতু।
একই সূত্র জানায়, লোকবলসংকট ও দীর্ঘদিনেও আধুনিকায়ন না হওয়ায় সেতু কারখানাটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ১২০ জন লেকবলের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২০ জন। সেতু কারখানাটির প্রধান সহকারী ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার (এবিই) এক বছর আগে অবসরে গেছেন। ঐ শূন্যপদ এখনো পূরণ করা হয়নি। এমনকি ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী পদেও লোকবল নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে এর অধিকাংশ কার্যক্রম। বর্তমানে ঐ কারখানাটিতে কাজ হচ্ছে রেলসেতুর গার্ডার নির্মাণ, রেলওয়ে স্থাপনার জন্য পানির ট্যাংক নির্মাণ, রেললাইনের জন্য পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রেসিং ও ট্যাংক রেল সেটআপ এবং হার্ডিঞ্জ সেতুর জন্য এক্সপাঞ্জ সুইচ নির্মাণ। এ ছাড়াও ঐ সেতু কারখানায় রেলের সেতু ও কালভার্ট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে কথা হয় কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে। অফিস ইনচার্জ আশরাফ আলী জানান, দীর্ঘদিনেও সেতু কারখানাটির আধুনিকায়ন হয়নি। কারখানাটির ইয়ার্ডে পড়ে আছে অব্যবহূত লোহালক্কড়। জঙ্গলে ঢাকা পড়ছে পুরো এলাকা। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে পাঁচটি এয়ার কম্প্রেশার, তিনটি ওয়েল্ডিং প্ল্যান্ট, উইংস ক্রাপ, গার্ডার ইয়ার্ডের শেয়ারিং মেশিন। অনুরূপ ৩৫টি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে, যার মূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
এ নিয়ে কথা হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর রেলওয়ে পূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (এইএন) আহসান উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কারখানাটিতে আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। লোকবলও নেই। ফলে যে কোনো সময় সেতু কারখানাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
সুত্র:ইত্তেফাক, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯