শিরোনাম

সীমান্ত চোরাচালানে ব্যবহার হচ্ছে রেল

সীমান্ত চোরাচালানে ব্যবহার হচ্ছে রেল

সুজিত সাহা:
সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের পণ্য পরিবহনে ব্যবহূত হচ্ছে রেলপথ। বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতি ঘটিয়ে চোরাচালানের পণ্য ওঠানো-নামানো হচ্ছে। রেলচালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা অ্যালার্ম চেইন পুলিং (এসিপি) ব্যবহার করে চোরাকারবারিরা এ কাজ করছে। এতে ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে রেল সেবা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে ও ঝুঁকি এড়াতে তাত্ক্ষণিকভাবে ট্রেন থামাতে শিকল ছাড়াও এসিপি নামের বিশেষ হুক ব্যবহার করা যায়। পুরনো কোচগুলোর অধিকাংশ শিকল অকেজো হলেও এসিপি সচল থাকে সবসময়। চোরাকারবারিরা এসিপি ব্যবহার করে সীমান্ত এলাকাগুলোয় ট্রেন থামিয়ে পণ্য ওঠানামা করে।

রেলের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে এসিপি ব্যবহার হয়েছে ৬২৩ বার। এতে ট্রেন বিলম্বিত হয় মোট ৬৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। তবে চলতি বছরের একই সময়ে ৬৫৫টি এসিপিতে ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে ৭২ ঘণ্টা ২৮ মিনিট। মূলত আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেই সবচেয়ে বেশি এসিপি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ছয় মাসে (মে-অক্টোবর) বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে এসিপি হয় মোট ৭৯টি। চলতি বছরের একই সময়ে মোট এসিপি ৪৯২টি। এছাড়া মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেনে গত বছর ১২২টি ও চলতি বছর ১৬৩টি এসিপি হয়েছে।

সম্প্রতি রেলওয়ে পুলিশকে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ। ১৮ নভেম্বর পাঠানো ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফাজিলপুর-ফেনী, মন্দবাগ-কসবা, ইমামবাড়ী-গঙ্গাসাগর, শশীদল-কসবা, পাঘাচং-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া-পাঘাচং, রাজাপুর-শশীদল, মুহুরীগঞ্জ-চিনকিআস্তানা, আখাউড়া-গঙ্গাসাগর সেকশনে সবচেয়ে বেশিবার অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রেন থামানোর ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো ঘটনাতেই দুষ্কৃতকারীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। মূলত ছাদের উপরে অবস্থানরত দুষ্কৃতকারীরা ট্রেনের প্রবেশপথের বাইরের দিকে থাকা ভ্যাকুয়াম হুক ঘুরিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেয়। ভ্যাকুয়াম ব্রেক কোথায় ঘোরানো হয়েছে সেটি শনাক্ত ও ব্রেক সংযুক্ত করার পরই ট্রেন আবার চলাচলের উপযুক্ত হয়। এ সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ছাদের ওপর কিংবা ট্রেনের অভ্যন্তরে রাখা চোরাইপণ্য নিয়ে নেমে যায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, সীমান্ত এলাকায় আগে এসিপি হতো। বর্তমানে রেলওয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে যেখানে সেখানে ট্রেন থামানোর প্রবণতা কমে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্পরতা বাড়ানো গেলে এসিপি আরো কমানো সম্ভব হবে।

রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা জানান, এসিপির মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ট্রেন থামিয়ে ওঠানো পণ্য রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রবেশের আগে আবারো ট্রেন থামিয়ে নামিয়ে নেয়া হয়। এজন্য ঢাকা-ক্যান্টনমেন্ট-তেজগাঁও, তেজগাঁও-ঢাকা, আড়িখোলা-পুবাইল, টঙ্গী-ভৈরববাজার, ঢাকা আউটার, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, দেওয়ানহাট, কদমতলী এলাকায় ট্রেন বেশি থামানো হয়।

এসিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা) নওরোজ হাসান তালুকদার বণিক বার্তাকে বলেন, ট্রেন থামিয়ে পণ্য চোরাচালানের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ট্রেনের অভ্যন্তরে দায়িত্ব পালন করলেও এসিপি হুক ট্রেনের বাইরে থাকায় দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা এরই মধ্যে ট্রেনের ছাদে যাত্রী চলাচলের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছি। সব ট্রেনে সম্ভব না হলেও ধারাবাহিকভাবে এসিপি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে ও নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চোরাইপণ্য পরিবহনের জন্য গভীর রাতে অনির্ধারিত স্থানে ট্রেন থামলে যাত্রীদের প্রাণহানি কিংবা ডাকাতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। একটি ট্রেনে মাত্র চারজন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকেন। নিরাপত্তা বাহিনীর এ স্বল্পসংখ্যক সদস্য দিয়ে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের প্রায় এক হাজার মানুষের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনির্ধারিত স্থানে ট্রেন থামিয়ে চোরাইপণ্য পরিবহন হলেও এখন পর্যন্ত তল্লাশিতে কোনো দুষ্কৃতকারীকে আটক করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিয়মিত বিরতিতে ট্রেনে তল্লাশি চালায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চোরাচালানের পণ্য আটক হয়নি।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, ট্রেন থামাতে দুষ্কৃতকারীর পাশাপাশি ট্রেনচালক ও গার্ডদেরও ভূমিকা রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানে ট্রেন থামলেও এসিপির কারণে থেমেছে কিনা তা টহলরত পুলিশ বুঝতে পারে না। তাছাড়া এসিপি রোধে পুলিশকে রেলওয়ের কর্মরত সদস্যরা কোনো সহযোগিতা না করায় ট্রেনে চোরাচালান হয় বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

সুত্র:বণিক বার্তা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.