সুজিত সাহা :
সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা ও যানজটের কারণে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কাছে ট্রেনই হয়ে ওঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের পাশাপাশি বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হোঁচট খেতে পারে রেলওয়ে। পাশাপাশি কোটা ও ভিআইপিদের জন্য অতিরিক্ত টিকিট সংরক্ষণের কারণে সাধারণ যাত্রীরা মোট আসনের ১০-১৫ শতাংশ টিকিট থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
ঈদ উপলক্ষে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ২ লাখ ৭৫ হাজার যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। এজন্য ট্রেনগুলোয় অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের পাশাপাশি ঘরমুখো যাত্রীর সুবিধার্থে বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিসের সাপ্তাহিক বন্ধও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের অংশ হিসেবে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন ট্রেনে ৮৫টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। প্রায় সমানসংখ্যক অতিরিক্ত কোচ সংযোজন হবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতেও। তবে প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে কম হবে। কারণ অতিরিক্ত ঘোষিত কোচের সংখ্যা নিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তারাই বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত ঘোষিত কোচের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের কোচও রয়েছে। ওয়ার্কিং টাইম-টেবিল অনুযায়ী বিভিন্ন ট্রেনে আবশ্যিক কোচকে অতিরিক্ত কোচ হিসেবে দেখানোয় প্রকৃতপক্ষে পূর্বাঞ্চলে কম্পোজিশনের চেয়ে বেশি কোচ হবে ৩৫-৪০টি। এর মধ্যে অতিরিক্ত ঘোষিত ২৪টি কোচ রোজার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রেনে সংযোজন হয়েছে। নিয়মিত সংযোজন ও মেরামত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংযোজিত কোচকেও অতিরিক্ত তালিকায় জুড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ঈদ উপলক্ষে আর মাত্র ১১ থেকে ১৬টি কোচ যুক্ত হতে পারে। যদিও ৮৫টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের কথা বলা হচ্ছে। একই অবস্থা পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতেও। সেখানেও নিয়মিত মেরামত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংযোজিত কোচকেও অতিরিক্ত হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
অতিরিক্ত কোচের সংখ্যা নিয়ে এ বিভ্রান্তির পাশাপাশি যোগ হয়েছে ভিআইপি টিকিটের চাপ। সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এবারো রিকুইজিশন (আসন সংরক্ষণ) টিকিট নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করেছে রেলওয়ে। আগামী ২ জুন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রণালয়, রেলভবন, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের জন্য টিকিট সংরক্ষণের চাপে সাধারণ যাত্রীরা প্রত্যাশার চেয়ে কম টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে। ভিআইপিদের জন্য টিকিট সংরক্ষণের বিষয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ১৭ মে রেলভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ভিআইপিদের টিকিট যথাসময়ে বিতরণে নানা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলের সাধারণ নিয়মেই টিকিট সংরক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রতিবন্ধী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সচিব ছাড়াও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সংগঠন ও প্রভাবশালীদের জন্য টিকিট সংরক্ষণের আওতায় থাকে। টিকিট ক্রয়-বিক্রয়ের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের সার্ভারের মাধ্যমে এসব টিকিট প্রতিটি ট্রেনে কোটা অনুযায়ী ব্লক করা থাকে। ঈদের আগে চাহিদা অত্যধিক বেড়ে গেলে নির্ধারিত কোটার বাইরে সাধারণ যাত্রীদের জন্য রাখা টিকিটও ব্লক করে সার্ভারে আটকে রাখা হয়। এ কারণে অনেক সময় নির্দিষ্ট ট্রেনের যে পরিমাণ টিকিট সাধারণ যাত্রীরা লাইন ধরে কাউন্টার থেকে কেনার সুযোগ পেত, ঈদের সময় সেটা তারা পায় না।
ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ে অতিরিক্ত প্রায় পৌনে তিন লাখ যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এজন্য পর্যাপ্ত কোচ ও ইঞ্জিনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আশা করি, অন্যান্যবারের চেয়ে এ বছর ট্রেনে ঈদযাত্রা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। বিশেষ ব্যবস্থায় টিকিট সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রেনের টিকিটের একটি বিশেষ কোটা বিদ্যমান রয়েছে। তবে ভিআইপিদের মতো সাধারণ যাত্রীরা চাইলেও বিশেষ ব্যবস্থায় টিকিটের ব্যবস্থা করে রেলওয়ে। ভিআইপিরা চাইলে অধিকাংশ সময় চেষ্টা করা হয়। সেক্ষেত্রে টিকিট প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে টিকিট দেয়া হলেও সাধারণ যাত্রীদের বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দেয়া হয়।
রেলের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ভিআইপিদের চাপে রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাউন্টারের টিকিটও আটকে রাখতে বাধ্য হয়। এতে সারা রাত অপেক্ষা করে লাইনের প্রথম দিকে থেকেও অনেকের টিকিট না পাওয়ার ঘটনা ঘটে। কোটা ও ভিআইপিদের টিকিট সংরক্ষণের কারণে মোট আসনের ১০-১৫ শতাংশ টিকিট থেকে বঞ্চিত হতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।
সুত্র:বণিক বার্তা, মে ২৭, ২০১৮