শিরোনাম

ময়মনসিংহে বিভিন্ন অংশে নাজুক রেলপথ!

ময়মনসিংহে বিভিন্ন অংশে নাজুক রেলপথ!

শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ

রেলপথের অবস্থা বেশ নাজুক। কোথাও বছরের পর বছর অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থেকে পচন ধরেছে স্লিপারে। কোনো কোনো স্থানে আবার অস্তিত্বই নেই নাট-বল্টু বা হুকের। বেহাল অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ রেল সেতুগুলোরও। ফলে ট্রেনযাত্রা হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। আবার অরক্ষিত রেলক্রসিংও হয়ে উঠেছে মরণফাঁদ। কিন্তু এসব যেন দেখার কেউ নেই।

কাঠের স্লিপারের ওপর লাইন বসিয়ে আটকানো হয় ক্লিপ দিয়ে। প্রতিটি স্লিপারের দুই পাশে কমপক্ষে আটটি করে ক্লিপ থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্লিপারের সঙ্গেই ক্লিপের বালাই নেই! উলটো পচে নষ্ট হয়ে গেছে একেকটি স্লিপার। আবার যেগুলো টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও নাজুক।

৬৬২ স্লি­পারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্লিপারই পুরোদমে অকেজো হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ এমন চিত্র ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৯০০ মিটার দীর্ঘ রেলসেতুর। এ সেতুর দুই পাশে রেলিং নেই। শুধু তাই নয়, হুক বোল্ট ও ডগ স্পাইক দুর্বৃত্তরা হরহামেশাই চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সেতুটি।

এরপরও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ সেতু ব্যবহার করে ময়মনসিংহ-ভৈরব, ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ-চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল করছে। অথচ উনিশ-বিশ হলেই এ সেতুটিতেও বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রেল লাইনের স্লিপার নষ্ট হয়ে নাজুক দশা তৈরি হয়েছে।

ময়মনসিংহ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সুকুমার সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্র রেলসেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তবে স্লিপারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য উচ্চ পর্যায়ে বছরখানেক আগে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ মেলেনি। বরাদ্দ পেলেই প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শুরু হবে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত জরাজীর্ণ এ সেতুর সংস্কার এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে এ সেতু পুনর্নির্মাণে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। ‘এ সেতুটির ওপর ট্রেন উঠলেই আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠে। বড়ো রকমের দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে দায় কে নেবে?’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ-জামালপুর রুটের বিদ্যাগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথের মোট ২০২ কিলোমিটার রুটে ২১০টির মতো লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ৬০ থেকে ৬৫টির। ১৫০টির মতো রেলক্রসিং অননুমোদিত। বেশিরভাগেই গেটম্যান বা গেট ব্যারিয়ার নেই।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল কালাম ময়মনসিংহের রেল ব্যবস্থাকে নাজুক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘অযত্নে অবহেলায় পচন ধরেছে স্লিপারের। নাটবল্টু খুলে গেছে। রেল সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো সংস্কার কিংবা মেরামতের উদ্যোগ নেই। রেলের টিকিট পর্যাপ্ত নয়। টিকিট কালোবাজারে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেন পর্যাপ্ত সংখ্যক নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডাবল রেল লাইনের দাবি থাকলেও এটা বাস্তবায়ন হয়নি। শহরের ভেতর রেল লাইন থাকায় বিভিন্ন স্থানে রেলক্রসিংয়ের সময় সারা শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমার দাবি দ্রুত রেল লাইন সংস্কার করা। পর্যাপ্ত টিকিট ও ডাবল রেল লাইনের ব্যবস্থা করা। রেল লাইনটি শহরের বাইরে স্থানান্তর করা। ময়মনসিংহ থেকে সিলেট আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করার দাবি করছি।’

সুত্র:ইত্তেফাক, ২১ অক্টোবর, ২০১৯



About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

2 Trackbacks & Pingbacks

  1. site
  2. No code testing automation tool

Comments are closed.