শিরোনাম

শনির দশা কাটছেই না

শনির দশা কাটছেই না

দেবাশীষ দেবু :

যান্ত্রিক ত্রুটি, কাঁচামাল সংকটসহ নানা অজুহাতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট। সর্বশেষ ১৯ মাস বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর চালু হয়েছিল এ প্লান্ট। তবে ১০ দিনের মাথায় কাঁচামাল সংকটের দোহাই দিয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। এরপর চলতি মাসের শুরুতে কারখানাটিতে আবার উৎপাদন শুরু হলেও রোববার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল। এভাবে গত পাঁচ বছর মিলিয়ে ১২ মাসও চালু রাখা যায়নি এ প্লান্ট।

একসময় দেশের একমাত্র স্লিপার প্লান্ট ছিল সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। গত এক দশকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে আরো কয়েকটি স্লিপার কারখানা গড়ে ওঠে। রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তারাই ওসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ করে দিতেই নানা অজুহাতে রেলওয়ের মালিকানাধীন এ প্লান্ট বারবার বন্ধ করে দেয়া হয়। যদিও সংশ্লিষ্টরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্লান্ট সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৯৮৮ সালে রেলওয়ের অধীনে স্থাপিত হয় দেশের একমাত্র কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট। ওই বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে এখানে উৎপাদন শুরু হয়। প্রথমে দৈনিক ২৬৪টি স্লিপার উৎপাদন হতো। বর্তমানে এখানে বছরে ৫০ হাজার স্লিপার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্লান্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, কংক্রিট স্লিপার তৈরির অন্যতম উপাদান হচ্ছে সিমেন্ট, পাথর ও বালু। ছাতকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিমেন্ট কারখানা অবস্থিত। এছাড়া এখানে উন্নতমানের পাথর ও বালু পাওয়া যায়। এ কারণে সরকার কংক্রিট স্লিপার প্লান্টটি ছাতকে প্রতিষ্ঠা করে। তবে স্লিপারের প্রধান কাঁচামাল হাইটেনশন স্টিল রড, ইনসার্ট স্টিল পাত ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

ছাতক রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ছাতকে তৈরি এসব স্লিপার রেলওয়ে লাইনের নিয়মিত সংস্কারকাজে ব্যবহূত হয় বেশি। এছাড়া রেলওয়ের বড় প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব কাজ হয়, সে কাজের জন্যও স্লিপার দরকার হয়।

চালুর পর এ কারখানায় টানা উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও ২০০০ সালের পর থেকেই শুরু হয় নানা গোলযোগ। বিভিন্ন সমস্যায় বারবার বন্ধ হতে থাকে প্লান্টটি। ২০১২ সালে একটানা প্রায় এক বছর বন্ধ থাকে। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে আবার একটানা বন্ধ থাকে প্রায় এক বছর। এ সময় থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অন্তত ১০ বার বন্ধ হয় প্লান্টটি। প্রতিবারই বন্ধ থাকে দীর্ঘ সময়। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে রেলমন্ত্রী ছাতকে এ প্লান্ট পরিদর্শনের সময় দ্রুত চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, দেশে গড়ে ওঠা বেসরকারি স্লিপার কারখানাগুলোকে সুবিধা করে দিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে বারবার প্লান্টটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোয় রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তারা যুক্ত থাকায় রেলের কাজে ছাতকের ওই প্লান্ট থেকে স্লিপার নেয়া কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্লান্টের এক শ্রমিক বলেন, এ কারখানার ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ফলে তুচ্ছ কারণেও উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়। উৎপাদিত স্লিপারের মান নিয়েও তেমন নজরদারি করা হয় না। ফলে স্লিপার কারখানাটির কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে এ প্লান্টের দায়িত্বে থাকা ছাতকে রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাবিব উল্লাহ বলেন, এ প্লান্ট অনেক পুরনো হয়ে গেছে। তাই মাঝে মাঝেই এখানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ওভারহোলিং করতে হয়। এছাড়া রেলওয়ের নিজস্ব জনবল নেই। তাই ঠিকাদারের মাধ্যমে জনবল দিয়ে চালাতে হয়। অনেক সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। আবার কাঁচামাল সংকটও রয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন সময় উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে।

তবে এ কারখানাটিতে যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালু রাখা যায়, সে ব্যাপারে রেলওয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তার কথায়, সর্বশেষ করোনার কারণে এ বছর এখানে উৎপাদন শুরু করা যায়নি। আর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়ায় যান্ত্রিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সূত্র:বণিক বার্তা, নভেম্বর ০৯, ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.