শিরোনাম

কমলাপুর আইসিডি সংস্কার: ডজন চিঠিতেও ঘুমে রেল


।। রেল নিউজ ।।
কোথাও বেরিয়ে গেছে রড। কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সেসব গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি, তৈরি হয়েছে মৃত্যুফাঁদ। ঢাকার কমলাপুর ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) পরিস্থিতি এমনই ভীতিকর।

আইসিডির এই বেহাল অবস্থার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু এ বছরেই রেলওয়েকে দিয়েছে ডজনখানেক চিঠি। তবে কোনোভাবেই ভাঙানো যাচ্ছে না রেলওয়ের অঘোর ঘুম। এ প্রেক্ষাপটে কনটেইনার হাতবদলের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকেই চরমপত্র দিয়েছে। তারা বলেছে, ওই আইসিডি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে ২০২৩ সাল থেকে তারা কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে।

কমলাপুর আইসিডি পরিচালনা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে বেসরকারি টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডকে এই আইসিডি অপারেশনাল কাজ করার দায়িত্ব দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে উভয় প্রতিষ্ঠান চুক্তিও করে। রেলওয়ের জায়গার ওপরই এই আইসিডি করেছে বন্দর। তাই এটি নিয়ে বন্দর ও রেলওয়ের মধ্যে আলাদা চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী আইসিডিতে কোনো সমস্যা হলে তা প্রথমে রেলওয়েকে জানাবে বন্দর। ২১ দিনের মধ্যে এটির কোনো সমাধান না হলে প্রয়োজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ সংস্কারসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে যা খরচ হবে তা রেলওয়ের সঙ্গে দেনা-পাওনার সময় সমন্বয় করতে পারবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমলাতান্ত্রিক এমন জটিলতার কারণে এই আইসিডি এখন চাইলেও সংস্কার করতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না তাৎক্ষণিকভাবে। সংস্কারের জন্য রেলওয়ের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বন্দর ও টার্মিনাল অপারেটরকে। এতে হচ্ছে সময়ক্ষেপণ। নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি। বাড়ছে নানা রকম ঝুঁকিও।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘কমলাপুর আইসিডি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করতে রেলওয়েকে অনেক তাগাদাপত্র দিয়েছি। তবে এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা।’ কমলাপুর আইসিডির উপ-ট্রাফিক ব্যবস্থাপক আহমেদুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘শুধু এই বছরে রেলওয়েকে অন্তত ৯ বার চিঠি দিয়েছি। যতবার চিঠি দিই ততবার তারা বলে, মেরামত একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া আর শেষ হচ্ছে না।’

বক্তব্য জানতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দায়িত্বশীল কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে অক্টোবরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে আইসিডির অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন উল্লেখ করেন, ‘দীর্ঘদিন মেরামত না করার ফলে বর্তমানে ইয়ার্ডের অবস্থা আগের চেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সিভিল কনস্ট্রাকশন স্থাপনা ভেঙে গেছে। ইয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।’ যন্ত্রপাতির ক্ষতি হওয়ার চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘কনটেইনার হ্যান্ডলিং কাজে নিয়োজিত যন্ত্রপাতির টায়ার ইয়ার্ডের গ্রাউন্ডে ভাঙা স্থানে বের হয়ে থাকা রডের আঘাতে প্রায়ই কাটা পড়ছে। কমলাপুর আইসিডিতে কাজ করতে গিয়ে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি ও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে আমাদের পক্ষে আর কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় চিঠি দিচ্ছে রেলওয়েকে। গত ১১ অক্টোবর রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পাঠানো চিঠিতে আগের ৯টি পত্রের তথ্য তুলে ধরেন উপ-ট্রাফিক ব্যবস্থাপক আহমেদুল করিম চৌধুরী। এই চিঠিতে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিটি চিঠির জবাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া’ বলে যে মন্তব্য করছেন, সেটিরও সমালোচনা করেন তিনি।

এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমলাপুর আইসিডিতে ২০ ফুট দীর্ঘ ৭৮ হাজার ৬৯৪টি কনটেইনার হাতবদল হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৬৪২টি।

সূত্রঃ সমকাল


Comments are closed.