ইসমাইল আলী:
যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেল সেতু নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়নশেষে এরই মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে। গত অক্টোবরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে রেল সেতুটি নির্মাণে এখনও জমি হস্তান্তর করেনি সেতু বিভাগ। বিনা মূল্যে জমি হস্তান্তরে সমঝোতা স্মারক সই করলেও এখন বাণিজ্যিক হারে ইজারা মূল্য দাবি করছে সংস্থাটি, যদিও প্রকল্পটিতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত নেই।
প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে চার দশমিক আট কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য পৃথক নদীশাসন করতে হবে না। জমি অধিগ্রহণও দরকার হবে না। নকশা প্রণয়নসহ যমুনা রেল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করছে রেলওয়ে।
যমুনা রেল সেতুর উভয়দিকে ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) থাকবে ৫৮০ মিটার। যমুনা ইকো পার্কের পাশ দিয়ে এটি বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। এজন্য ছয় দশমিক দুই কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। আর রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করতে হবে।
সূত্রমতে, যমুনা রেল সেতু নির্মাণে গত ২৬ জুলাই সেতু বিভাগের কাছে ১৬৮ দশমিক ৫৭ একর স্থায়ী ও ২৬২ দশমিক ৫২ একর জমি অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগ জানায়, যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ে টাঙ্গাইলে ১৬৫ দশমিক ৩৪ ও পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জে ৯৭ দশমিক ১৮ একর জমি অস্থায়ীভাবে ইজারা দেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ২৬২ দশমিক ৫২ একর জমির জন্য ভ্যাট ও আয়করসহ প্রথম বছর ইজারা মূল্য বাবদ এক কোটি ৫৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তীকালে প্রতি বছর ইজারা মূল্য ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে সেতুটির পশ্চিমপাড়ে সিরাজগঞ্জের ৯৭ দশমিক ২২ একর জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব। আর উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় টাঙ্গাইলের ৭১ দশমিক ৩৫ একর জমি এখনই বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। হাইকোর্টের অনুমতিপ্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তীকালে এ জমি বরাদ্দ প্রদান করা হবে। তবে স্থায়ী জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে চলতি বাজারদরে জমির মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদিও প্রকল্পটির ব্যয়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যমুনা রেল সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভায় জানানো হয়, যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেল সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির সবটুকুই সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন। এ জমি হস্তান্তরের লক্ষ্যে উভয় সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন প্রদান করেন। এ কারণে ডিপিপিতে ভূমি অধিগ্রহণ বা হস্তান্তরের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি।
সভায় সেতু কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী জমি ইজারা বাবদ বাণিজ্যিক হারে প্রতি শতাংশের জন্য ৫০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছে। আর স্থায়ী জমি অধিগ্রহণে চলতি বাজারদরে মূল্য পরিশোধের প্রয়োজন হতে পারে। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান জানান, প্রকল্পটির জন্য বিনা মূল্যে জমি হস্তান্তরে দুই সংস্থার মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়েল মহাপরিচালক জানান, প্রকল্পটিতে জমি অধিগ্রহণ বা ইজারা বাবদ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পরে ডিপিপি সংশোধন করে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ডিপিপি সংশোধন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দ্রুত জমি ব্যবহারের অনুমতি দিতে সেতু বিভাগকে অনুরোধ করা হয়। যদিও অস্থায়ী ভিত্তিতে জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে সেতু বিভাগের বাণিজ্যিক হারে ইজারা মূল্য নির্ধারণ ঠিক হয়নি বলে বৈঠকে মত দেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, যমুনা রেল সেতু নির্মাণে জমি হস্তান্তরজনিত জটিলতা নিরসনে অতি শিগগিরই প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা আহ্বান করা হবে। এক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করা যেতে পারে। আপাতত জমি হস্তান্তরে সেতু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। পরে ডিপিপি সংশোধন করে জমি হস্তান্তর বাবদ অর্থ প্রদান করা হবে।
সুত্র:শেয়ার বিজ,ডিসেম্বর ২০, ২০১৮