শিরোনাম

কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমকে নামমাত্র জরিমানা রেলের

কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমকে নামমাত্র জরিমানা রেলের

ইসমাইল আলী: চুক্তি ভঙ্গ করে রেলের ১০ ইঞ্জিনে নিন্মমানের যন্ত্রাংশ সংযোজন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম। পরে কোম্পানিটি তা স্বীকার করে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটিও এর সত্যতা পায়। তা সত্তে¡ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু নামমাত্র জরিমানা করা হয়েছে কোম্পানিটিকে। এছাড়া নিম্ন মানের ইঞ্জিন কেনার সঙ্গে জড়িত রেলের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সূত্রমতে, ১০ ইঞ্জিন কেনায় চুক্তি হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। এগুলোর ক্রয়মূল্য ছিল ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ থেকে ৯০ শতাংশ অর্থ তথা প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা গত বছর নভেম্বরে পরিশোধ করা হয়। বাকি ২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা অর্থ আটকে রাখা হয়। তবে সম্প্রতি সে অর্থও পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এজন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে (এডিবি) চিঠি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইঞ্জিনের মূল্য থেকে মাত্র সাত কোটি টাকা কেটে রাখা হবে। বাকি প্রায় ২২ কোটি ৬৩ লাখ পরিশোধ করে দেয়া হবে।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান মনসুর এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, ইঞ্জিনগুলোর মূল্য থেকে ১০ শতাংশ আটকে রাখা হয়েছিল। হুন্দাই রোটেম চুক্তি ভঙ্গ করে ভিন্ন মডেলের অলটারনেটর সংযোজন করায় তা আটকে রাখা হয়। অলটারনেটর বদলে দিলে বাকি অর্থ দেয়া হতো। এজন্য ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছিল, কিন্তু কোম্পানিটি তা করেনি। তাই অলটারনেটর মূল্যের ৩৩ শতাংশ কেটে রাখা হচ্ছে। এর পরিমাণ প্রায় সাত কোটি টাকা। বাকিটা পরিশোধ করতে এডিবিকে কনসেন্ট লেটার (সম্মতিপত্র) দেয়া হয়েছে। তারা অর্থ পরিশোধ করে দেবে।

যদিও অলটারেটর ছাড়া ইঞ্জিনগুলোয় অন্যান্য যন্ত্রাংশও নি¤œমানের। এজন্য ২০২০ সালের আগস্টে ইঞ্জিনগুলো দেশে এলেও তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক নূর আহাম্মদ। পাশাপাশি নি¤œমানের ইঞ্জিন সরবরাহের কারণে হুন্দাই রোটেমের বিল আটকে দেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত বছর ২৫ ফেব্রæয়ারি রেলপথ সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি।

এতে বলা হয়, ইঞ্জিনগুলো তৈরিতে কারিগরি শর্ত অনুসরণ করা হয়নি। ইঞ্জিন, অলটারনেটর, কম্প্রেসার ও ট্রাকশন মোটর এ চারটি ক্যাপিটাল কম্পোনেন্টস চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি। ফলে টেস্ট রানের সময় ইঞ্জিনের ব্রেক হর্সপাওয়ার ২২০০বিপিএইচ ও ট্রাকশন হর্সপাওয়ার ২০০০টিএইচপি হওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যায় যথাক্রমে ২১৭০বিপিএইচ ও ১৯৪২টিএইচপি। এজন্য ইঞ্জিন সরবরাহকারী হুন্দাই রোটেম ও প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেক্টর সিসিআইসিকে অভিযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি চুক্তি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। তবে কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

উল্টো ইঞ্জিনগুলো চালানোর উপযুক্ত কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ২৩ মার্চ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মতামত দেয়, হুন্দাই রোটেমের ১০ ইঞ্জিন চালানোয় কোনো সমস্যা নেই। শুধু ইঞ্জিন ঘুরানোর সময় কিছুটা সমস্যা হয়। তবে চুক্তি ভঙ্গ করায় ওই অবস্থায় ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ইন্ডিপেনডেন্ট রিভিউয়ারের মাধ্যমে যাচাই করে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ কাজে নিয়োগ দেয়া হয় বিতর্কিত সাবেক এক রেল কর্মকর্তাকে। তিনি এক্ষেত্রে ইতিবাচক মতামত দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৪ পর ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয়। গত বছর অক্টোবরে ইঞ্জিনগুলো বিভিন্ন ট্রেনে সংযোজন করা হলে কয়েকটি ফেল করে। এদিকে করোনার কারণে ইঞ্জিনগুলো প্রস্তুত করার সময় কোরিয়ায় স্টাডি ট্যুরে যেতে পারেননি রেলওয়ে কর্মকর্তারা। পাশাপাশি কিছু যন্ত্রাংশও সরবরাহ করেনি কোম্পানিটি। এজন্য চুক্তিমূল্য থেকে আরও প্রায় ১০ কোটি টাকা বাদ যাচ্ছে।

এদিকে নিম্ন মানের ইঞ্জিন কেনায় জড়িত ছিলেন রেলের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তবে তাদের কারও বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টো ইঞ্জিনগুলো গ্রহণে আপত্তি করায় প্রকল্প পরিচালককে বদলি করে দেয়া হয়। সে জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয় হাসান মনসুরকে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘রেলওয়ের ১০ ইঞ্জিন কেনায় অনিয়ম: নিম্ন মানের ইঞ্জিন সরবরাহ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় শেয়ার বিজে। পরে ইঞ্জিনগুলোর অনিয়ম নিয়ে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়।


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.