।। নিউজ ডেস্ক ।।
পুরোনো কোচ প্রতিস্থাপনে ২০০ ব্রডগেজ কোচ কিনবে রেলওয়ে। ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) ঋণে কোচগুলো কেনা হবে। এগুলোর দাম ধরা হয়েছে এক হাজার ৩১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যদিও সম্ভাব্যতা যাচাইকালে এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোচগুলো কেনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি ব্যয় করতে হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটি আগামীকাল অনুমোদনের কথা রয়েছে।
ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম পড়ছে ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। যদিও কোচগুলোর দাম নিয়ে আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন। তবে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। উল্টো ব্যয় আরও বেড়ে যাচ্ছে।
তথ্যমতে, ২০০ ব্রডগেজ কোচ কেনায় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ৩৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দেবে ইআইবি। অবশিষ্ট ৩৭৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পটির ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০ কোচের মধ্যে রয়েছে এক সেট রাষ্ট্রপতির ব্যবহারোপযোগী (চার কোচের) সেলুন, তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইন্সপেকশন কার, চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স স্লিপার কার, ২৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার, ৪২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার, ৮০টি শোভন চেয়ার কার, ১৬টি ডাইনিং ও নামাজের ব্যবস্থা সংবলিত শোভন চেয়ার কার ও ২৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাগেজ ভ্যান সংবলিত পাওয়ার কার।
কোচগুলো কেনায় সম্ভাব্যতা যাচাইকালে উপরোল্লিখিত ধরনভেদে প্রতিটি কোচের একক দর ধরা হয়েছিল যথাক্রমে ২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, সাত কোটি তিন লাখ, আট কোটি ১৬ লাখ, পাঁচ কোটি ১১ লাখ, চার কোটি ৭১ লাখ, চার কোটি ১৮ লাখ, চার কোটি ১১ লাখ ও পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
যদিও প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার সময় ধরনভেদে প্রতিটি কোচের একক দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ১০ কোটি ১৭ লাখ, সাত কোটি ৫১ লাখ, ছয় কোটি ৩৬ লাখ, ছয় কোটি ২৩ লাখ, পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ, পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ও আট কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রত্যেক ধরনের কোচের দামই বাড়তি ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে কোচগুলোর দাম ৩৬৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, কোচগুলোয় বায়ো-টয়লেটসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হচ্ছে। তাই দাম কিছুটা বেশি পড়ছে। আর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তার সঙ্গে বছরভিত্তিক গড় মূল্যস্ফীতি যোগ করে দাম প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে দাম বেশি পড়াই স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত, কোচগুলো কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত বছর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় রেলওয়ে। সে সময় ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম ধরা হয়েছিল ছয় কোটি ৩৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা। উচ্চ ব্যয় নিয়ে সে সময় আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন। তবে ব্যয় না কমে উল্টো বেড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, ইআইবির ঋণে ২০০ কোচ কেনার ক্ষেত্রে ভারতের ঋণে কেনা কোচের দামকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। ওই কোচগুলোর দাম ছিল ছয় কোটি ৩৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বছরভিত্তিক তিন শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিজনিত ব্যয় যোগ করা হয়েছে। এতে ভ্যাট-শুল্ক ছাড়া প্রতিটি কোচের দাম পড়ছে ছয় কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের ঋণে কোচ কেনার ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তাতে ভারতীয় কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ অংশ নিতে পারেনি। এতে কোচের দাম কিছুটা বেশি পড়েছে। আর ইআইবির ঋণে উম্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এডিবির ঋণে কোচ কেনার ক্ষেত্রেও উম্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কমে কোচ কিনেছিল রেলওয়ে। তাই এবারও দাম কম পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে রেলওয়ের ৪২৮টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৭টির অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। মাস্টারপ্যান অনুযায়ী আগামী ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে রেলওয়ের সব ট্র্যাক ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে। এছাড়া যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প সম্পন্ন হলে সারাদেশে ব্রডগেজ ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এজন্য পুরোনো কোচগুলো প্রতিস্থাপনসহ ২-৪ বছরের মধ্যে নতুন ৪০০ কোচ দরকার হবে। তাই নতুন কোচগুলো কেনা জরুরি বলে ডিপিপি উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র: শেয়ার বিজ