শিরোনাম

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের সব ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের সব ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া

ইসমাইল আলী: রেলওয়েতে বর্তমানে শূন্যপদ রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। এতে যাত্রী সেবা প্রদানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সংস্থাটি। এজন্য বেশকিছু পদে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে। সংস্থাটির এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে ১৯৮৫ সালের বিধির মাধ্যমে। তবে এ নিয়োগবিধি অবৈধ বলে মত দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া। এতে রেলের জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের জারিকৃত নিয়োগবিধি ও ১৯৬১ সালে প্রণীত কোড অনুসরণ প্রসঙ্গে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত ১৬ অক্টোবর এর জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধির অধীন রেলে কোনো নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই। কারণ উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক সরকারের সময় প্রণীত আইন ও বিধিমালা বাতিল হয়ে গেছে। যদিও দুই দফায় ১৬৬টি আইন ও বিধিকে সুরক্ষা আইনের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে রেলওয়ের নিয়োগবিধি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধি প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, ‘সিভিল আপিল নং-৪৮/২০১১-এ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ (১৯৮৬ সনের ১নং আইন)-এর ধারা ৩ এবং বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষিত হওয়ায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে ১৯৭৫ সনের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের জারিকৃত অধ্যাদেশ/নিয়োগবিধিসমূহ অবৈধ ঘোষিত হয়েছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের প্রণীত দুটি সুরক্ষা আইনের তফসিলভুক্ত ৮৫ ও ৮১টিসহ মোট ১৬৬টি অধ্যাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধি অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে এটার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলায় এর অধীনে কোনো নিয়োগ প্রদানের সুযোগ নেই। তাই বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধন ব্যতীত নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণেরও সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। এক্ষেত্রে দ্রুত করণীয় নির্ধারণে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমস্যা সমাধান করা যাবে।

এদিকে ১৯৬১ সালের প্রণীত কোড প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯৮৩ সালে এক অধ্যাদেশ বলে রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং তা ২০১৩ সালে আইনে পরিণত করা হয়েছে। আইনটিতে রেলওয়ের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশের কপিসহ ১৯৬১ সালের প্রণীত কোড জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে মতামত দেবে।

সূত্রমতে, বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল রয়েছে ৪০ হাজার ২৭৫টি। তবে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৬২২ জন। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৬৫৩টি পদ শূন্য। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৮০০ শূন্যপদই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। আর এসব পদ সরাসরি বিভিন্ন সেবা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

বর্তমানে রেলে সবচেয়ে বেশি শূন্য রয়েছে তৃতীয় শ্রেণির পদ। এ শ্রেণির শূন্যপদ রয়েছে ৪২ শতাংশ বা ৯ হাজার ৪১টি পদ। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৯টি বা ৩৫ শতাংশ। এদিকে জনবল সংকটের কারণে সারা দেশে রেলের ৪৩৭টি স্টেশনের মধ্যে ১৩৯টি বন্ধ। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ৫৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৮৩টি। এছাড়া সারা দেশে রেলের এক হাজার ৪০২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৯৪৬টিতে কোনো গেটকিপার নেই। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে গেটকিপারবিহীন অরক্ষিত ক্রসিং রয়েছে ৪৩৪টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯৬৮টি।

এজন্য বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সব নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগবিধি বাতিল হওয়ায় রেলওয়ের বিদ্যমান কর্মরতদের পদোন্নতিও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ রেলওয়েতে এমন অনেক পদ রয়েছে, যেগুলো অন্য কোনো সংস্থার সমমানের হলেও পদবি মিলে না। শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেই এক হাজারের বেশি পদবি রয়েছে। এসব পদে রেলওয়ে নিয়োগবিধি ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে রেলের নিয়োগবিধি আধুনিকায়নে ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে সময় একটি খসড়া বিধি মতামতের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের অবহেলার কারণে ছয় বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এখন জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার জন্য আজ রেলের এ দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে। ছয় বছর আগে খসড়া করা হলেও তারা বিধিটি চূড়ান্ত করেনি। আবার ২০১৩ সালে সুরক্ষা আইনে রেলওয়ের নিয়োগবিধি অন্তর্ভুক্ত করার কোনো উদ্যোগও নেয়নি। ফলে এখন নতুন সংকটের সৃষ্টি হলো।

সুত্র:শেয়ার বিজ, নভেম্বর ৬, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.