শিরোনাম

রেলের সরঞ্জাম বিভাগে জনবল কমাতে তৎপর সিন্ডিকেট

রেলের সরঞ্জাম বিভাগে জনবল কমাতে তৎপর সিন্ডিকেট

মাকসুদ আহমদ:

রেলের পূর্ব ও পশ্চিম জোনকে সমন্বয় করে চারটি জোনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই পরিবর্তনের নামে ১৩টি বিভাগের সঙ্গে সরঞ্জাম বিভাগের বৈষম্য সৃষ্টিতে সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। সরঞ্জাম বিভাগে জনবল হ্রাস করে এই সংস্কারের চক্রান্ত চলছে বলে রেল ভবন সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সরঞ্জাম বিভাগের জনবল মঞ্জুরিকে মাত্র ৫০ ভাগে নামিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চক্রের কর্ণধাররা। চলছে প্রস্তাবিত ৪ জোনের জনবল কাঠামো সংস্কারের নামে চক্রান্ত ও সরঞ্জাম বিভাগকে অবমূল্যায়নের নীলনক্সা। আরও অভিযোগ রয়েছে, সরঞ্জাম বিভাগের ম্যাটরিয়াল চেকার, লেটার ম্যান ও খালাসী পদকে ব্লক করে রাখা হয়েছে। ফলে এসব পদে কর্মরতরা কখনও পদোন্নতি পাবে না।

এদিকে, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে রেল যোগাযোগকে সচল রাখতে ৩৫ হাজার আইটেমের একমাত্র আশ্রয়স্থল সরঞ্জাম বিভাগকেই বিলীন করার নীলনক্সা তৈরি করছে চক্রটি। আরও অভিযোগ উঠেছে, সরঞ্জাম বিভাগকে বাদ দিয়ে শতভাগ ক্রয় পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে চায় মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ অবশিষ্ট ১২টি বিভাগ। অথচ সেন্ট্রালাইজড প্রকিউরমেন্টের বিধান অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে মাত্র ২০ ভাগ ক্রয়াদেশ রয়েছে সরঞ্জাম বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগের। এ পর্যন্ত আট দফায় চিঠি চালাচালি হলেও এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি নিম্নœলিখিত বিষয়ে। আরও জানা গেছে, রেলের ক্যারেজ, ওয়াগন, লোকোমটিভ, পি ওয়ে ম্যাটেরিয়াল, সিগন্যালিং ও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের যন্ত্রপাতিসহ রেলের স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়ের একমাত্র আশ্রয়স্থল সরঞ্জাম বিভাগ। শুধু তাই নয় পণ্য ও সরঞ্জাম ক্রয়, সংগ্রহ, মজুদ ও সরবরাহ নির্ভর করে সরঞ্জাম বিভাগের ওপর। শুধু বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সরকারের আমলেই নয় খোদ ব্রিটিশরা পর্যন্ত রেলের যাবতীয় ক্রয় সরঞ্জাম বিভাগের মাধ্যমেই নিশ্চিত করেছে। সেন্ট্রালাইজড প্রকিউরমেন্টের আওতায় থাকা এই সরঞ্জাম বিভাগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। অপরদিকে রেলকে সচল করতে আমদানিকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা ও স্ক্র্যাপ বা নষ্টকৃত দ্রব্য বিক্রি করে সরঞ্জাম বিভাগ। রেলের উন্নয়নে কোচ ক্রয় থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের পর রোলিং স্টকের মাধ্যমে নিয়মিত মেরামত কার্যক্রম সরঞ্জাম বিভাগের মাধ্যমেই হচ্ছে।

রেলের উভয় জোনের কর্ম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রেলের মেরামত কাজ থেকে শুরু করে কোচ ক্রয় ও রোলিং স্টকের মাধ্যমে মেরামত সরঞ্জাম বিভাগের ক্রয়াদেশ থেকেই হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কোচ, ওয়াগন ও লোকমোটিভের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করতে রেললাইনের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সরঞ্জাম বিভাগ সঠিক সময়ে সঠিক উৎস হতে, সঠিক মূল্যে, সঠিক পরিমাণ এবং সঠিক মালামাল তথা স্পেয়ার্স পার্টস ক্রয়/সরবরাহের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করছে সরঞ্জাম বিভাগ।

ঢাকার রেল ভবনস্থ প্রকল্প পরিচালক(পিডি/রিফর্ম) দফতর সূত্রে জানা গেছে, সরঞ্জাম বিভাগের জনবল কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব করা হয় ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর। এ বিষয়ে রেলভবনে জনবল কাঠামো চূড়ান্তকরণের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় তৎকালীন রেল সচিব সভাপতিত্ব করেন। রেলের দু’টি জোনের পরিবর্তে মোট চারটি জোনে রূপান্তর করে জনবল কাঠামো ৫৬ হাজার ৯৬১ করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়। রেলের ১৩টি বিভাগের মধ্যে ১২টি বিভাগে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাবনা গৃহীত হলেও শুধু সরঞ্জাম বিভাগের ক্ষেত্রে জনবল কমানোর চক্রান্ত শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, সরঞ্জাম বিভাগের লোকবল মঞ্জুরি ১ হাজার ৩১৪ হলেও প্রকল্প পরিচালকের পক্ষ থেকে তা প্রায় ৫০ ভাগ কমিয়ে ৭৪১ জনে নামিয়ে আনার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। যা জনবল কাঠামোর ৫৬ শতাংশ মাত্র। অভিযোগ উঠেছে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সরঞ্জাম বিভাগের কর্ম পরিচালনায় ধস নেমে আসবে। এদিকে, সরঞ্জাম বিভাগের পক্ষ থেকে ১ হাজার ২৭৯টি পদের প্রস্তাবনা দেয়া হলেও প্রকল্প পরিচালকের দফতর থেকে আবারও কমিয়ে ১ হাজার ২৩০টি পদের প্রস্তাব করা হয়। শেষতক চক্রান্ত করে কার্যবিবরণীর অনুচ্ছেদ ২ এ সরঞ্জাম বিভাগের প্রস্তাবিত জনবল ৭৩৪ এবং সংশোধিত প্রস্তাবিত জনবল ৭৩৪ দেখানো হয়েছে। সরঞ্জাম বিভাগ এ ধরনের প্রস্তাবনা চক্রান্তমূলক বলে দাবি করেছে। এমনকি এ ধরনের প্রস্তাবনা কখনও দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, রেলওয়েতে ১৩টি বিভাগের জনবল কাঠামো সংস্কার করে ৫০ হাজার ২৭৫ জনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, উভয় জোনে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে ৩নং গ্রেডের কোন মঞ্জুরি না থাকলেও প্রকল্প পরিচালক(রিফর্ম) বরাবর উভয় জোনে ২ ও ৩নং গ্রেড কার্যকরের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও রেলভবনে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের জন্য একটি যুগ্ম-মহাপরিচালক(জেডিজি) পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা করা হয়েছে। অথচ রেল ভবনে এডিজি/ ফিন্যান্সসহ সব ধরনের এডিজি পদ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম বিভাগের কোন এডিজি(অতিরিক্ত মহাপরিচালক) নেই। যা সরঞ্জাম বিভাগের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয়।

সুত্র:জনকন্ঠ, ৩ নভেম্বর ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.