সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম:
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮৫৪ একর জমি বেদখল হয়েছে। আর এসব জমিতে গড়ে উঠেছে নয় হাজার ৬২৬টি অবৈধ স্থাপনা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে দখল করেছে ৫২৫ একর জমি ঢাকা বিভাগে ৩৭৫ একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫০ একর। আর বিভিন্ন ব্যক্তি দখল করেছে ৩২৮ একর।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সর্বশেষ জমিজমার হালনাগাদ জরিপ অনুযায়ী মোট সম্পত্তি রয়েছে (বিক্রীত জমি বাদে) ২৪ হাজার ৪৪০ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১৭ হাজার ১৬৯ একর ও চট্টগ্রাম বিভাগে সাত হাজার ২৭১ একর জমি। এসব জমির মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অপারেশন কাজে ব্যবহার করা হয় মোট ১৫ হাজার ৩১ একর জমি। ঢাকা বিভাগে অপারেশন কাজে ব্যবহার করা হয় ১০ হাজার ৬৩৫ একর ও চট্টগ্রাম বিভাগে চার হাজার ৩৯৬ একর জমি।
অপরেশন কাজে ব্যবহার করা জমি ছাড়া অবশিষ্ট জমির পরিমাণ নয় হাজার ৪০৯ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে অবশিষ্ট জমির পরিমাণ ছয় হাজার ৫৩৩ একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৮৭৫ একর। লাইসেন্সকৃত জমির পরিমাণ চার হাজার ৯৭১ একরÑঢাকা বিভাগে তিন হাজার ৩৯৩ একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৫৭৮ একর। বাণিজ্যিক ভূমি রয়েছে ৪৮৭ একর ঢাকা বিভাগে ৩৩ একর ও চট্টগ্রামে ৪৫৪ একর। কৃষিতে চার হাজার ৮৪ একর। ঢাকা বিভাগে তিন হাজার ১৭৫ একর। ৯০৮ একর কৃষি ভূমি রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মৎস্য খাতে ব্যবহার করা হয় ৩৪২ একরÑঢাকা বিভাগে ১৭২ একর ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭০ একর ভূমি মৎস্য খাতে ব্যবহার করা হয়। নার্সারি খাতে তিন একর। সিএনজি খাতে ব্যবহার করা হয় ১২ একর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় ৪১ একর। ঢাকা বিভাগে তিন একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭ একর।
বর্তমানে অবৈধ দখলীয় জমি রয়েছে ৮৫৪ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে বেদখল ভূমি রয়েছে ৬৮৪ একর। অবৈধ স্থাপনা রয়েছে দুই হাজার ৩৪৩টি। চট্টগ্রাম বিভাগে বেদখল ভূমি রয়েছে ১৬৯ একর। অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সাত হাজার ২৮৩টি।
আর অব্যবহƒত ভূমির পরিমাণ তিন হাজার ৫৮৩ একর। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে দুই হাজার ৪৫৫ একর এবং এক হাজার ১২৭ একর চট্টগ্রাম বিভাগে। বিক্রীত জমির পরিমাণ ৩৬৫ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে বিক্রি করা হয়েছে ১৮৪ একর এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮১ একর।
রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি শাখা সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগে সরকারি সংস্থাগুলো রেলওয়ের জমি দখল করেছে ৩৭৫ একর। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে ২৪টি। চট্টগ্রাম বিভাগে সরকারি সংস্থাগুলো দখল করেছে ১৫০ একর জমি। অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা আটটি। বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি মিলে ঢাকা বিভাগে ভূমি দখল করেছে ৩০৮ একর। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে দুই হাজার ৩৪৩টি। জামালপুর এলাকায় ৬০টি, ময়মনসিংহে ৩১৮টি, ঢাকা সদর এলাকায় ৫৫৩টি, শ্যামপুরে ৫৩টি, কিশোরগঞ্জে ৮৬টি, নরসিংদীতে ৩২৯টি, আখাউড়াতে ৪৬৮টি, ছাতক বাজার এলাকায় ১৩৯টি, কুলাউড়ায় ১২১টি এবং সায়েস্তাগঞ্জে ২০৭টি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। আর চট্টগ্রাম বিভাগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলে দখল করেছে ৯৯ একর। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে সাত হাজার ২৮৩টি। সদর কাচারি এলাকায় ৩৪টি, ষোলশহরে এক হাজার ৪৮২টি, ফেনী এলাকায় ৮৯০টি, লাকসামে ৮৩৭টি এবং কুমিল্লায় ৫৯৫টি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
রেলওয়ের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্বাঞ্চল) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট জমি রয়েছে ২৪ হাজার ৪৪০ একর। অপারেশন কাজে ব্যবহার করা হয় ১৫ হাজার একর আর অবৈধ দখলকারীদের হাতে রয়েছে ৮৫৪ একর। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে রয়েছে ৩২৮ একর এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫২৫ একর জমি বেদখল হয়ে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগ সড়ক ও জনপদ বিভাগ দখল করেছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এই সম্পত্তিগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এর নেপথ্যে রয়েছে সমাজের প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রুষ্টপুষ্ট কিছু লোক। তবে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন সময় নিয়মিত উচ্ছেদ করে থাকি। গত অর্থবছরে ৪৮ একর জমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। এইসব দখলমুক্ত জায়গাগুলো তারকাঁটা ও দেওয়াল দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়।
সুত্র:শেয়ার বিজ