শিরোনাম

নকশা সংশোধনে নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ২৭ শতাংশ

নকশা সংশোধনে নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ২৭ শতাংশ

ইসমাইল আলী:
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে খুলনার রেলসংযোগ স্থাপনে নির্মাণ করা হচ্ছে খুলনা-মংলা রেলপথ। এর আওতায় পৃথক রূপসা রেল সেতু নির্মাণ করা হবে। ২০১৫ সালের আগস্টে সেতুটি নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগের পর ত্রুটি ধরা পড়ে এর নকশায়। লোড টেস্টে দুই দফা ফেল করে সেতুটির পরীক্ষামূলক পাইল। ফলে এর নকশা সংশোধন করা হয়। এতে বেড়ে গেছে রূপসা রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয়।
গত বছর বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ব্যয় বৃদ্ধিসংক্রান্ত ভেরিয়েশন প্রস্তাব দাখিল করেছে সেতুটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসন অ্যান্ড তুর্বো লিমিটেড ইন্ডিয়া। এক্ষেত্রে সেতুটির নির্মাণব্যয় বাড়ছে ২৯২ কোটি টাকা। সম্প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত খুলনা-মংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

তথ্যমতে, বর্তমানে রূপসা রেল সেতু নির্মাণে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি মূল্য ছিল এক হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ভেরিয়েশন প্রস্তাব যুক্ত হলে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে এক হাজার ৩৬৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বাড়ছে প্রায় ২৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেতুটির কাজ হয়েছে ২০ শতাংশেরও কম।

স্টিয়ারিং কমিটির সভায় জানানো হয়, রূপসা রেল সেতু নির্মাণে লারসন অ্যান্ড তুর্বোর সঙ্গে চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ২৪ আগস্ট। এর চুক্তি মূল্য ছিল এক হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে মাটির গুণগত মান অস্বাভাবিক ও খারাপ প্রকৃতির হওয়ায় টেস্ট পাইলের বাস্তব ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে পাইলের গভীরতা (লেংথ) বৃদ্ধি ও পাইলের নিচে নন-টেন্ডার আইটেম বেইজ গ্রাউটিং অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গত বছর ডিসেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৯২ কোটি টাকার ভেরিয়েশন দাখিল করে। বর্তমানে তা অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট রেলওয়ের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ভেরিয়েশন প্রস্তাবে সেতু নির্মাণে ২৯২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু বাড়তি ব্যয় প্রকল্পে ধরা নেই। তাই প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে। আবার ২৭ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি প্রস্তাব ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হবে। তাই আপাতত ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন করে কাজ চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী প্রকল্প সংশোধন করে বর্ধিত ব্যয় সমন্বয় করা হবে।

সূত্রমতে, রূপসা রেল সেতুর পাইল করার পর গত বছর শুরুর দিকে নকশায় ত্রুটির বিষয়টি ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে খুলনা প্রান্তের ভায়াডাক্ট অংশে একটি ৪০ মিটার গভীর দেড় মিটার প্রস্থ ডায়া টেস্ট পাইল করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি এ লোড টেস্ট করা হলে ফলাফল সন্তোষজনক হয়নি। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আবার একই স্থানে ৪০ মিটারের পরিবর্তে ৫২ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরেকটি পাইলের নকশা জমা দেয়। এক্ষেত্রে একটি বেইজ গ্রাউটিংসহ ও আরেকট বেইজ গ্রাউটিং ছাড়া লোড করতে বলা হয়।

টেস্ট পাইলের নকশাটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেশাদার প্রকৌশলী দ্বারা পরীক্ষা করে প্রত্যয়ন গ্রহণের সুপারিশ করে রেলওয়ে। তবে বুয়েটের প্রত্যয়ন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে বলা হয়, কোনো নকশা দাখিলের আগেই পেশাগত প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন গ্রহণ করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বেইজ গ্রাউটিং ছাড়া ৫২ মিটার দৈর্ঘ্যরে দেড় মিটার ডায়া টেস্ট পাইল করে একই বছর ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত লোড টেস্ট করা হয়। তবে দুটি পাইলই লোড নিতে ব্যর্থ হয়। এতে নির্মাণকাজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন পিয়ার পয়েন্টে মাটির অবস্থা খুবই খারাপ। এটি এতটাই খারাপ যে, ডিজাইন লোড বহন করা খুবই কঠিন। এজন্য প্রতিটি পিয়ার লোকেশনে পাইল আবার ডিজাইন করতে হবে।
সে সময় রেলভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মপক্ষের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বেইজ গ্রাউটিং করে পাইলের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মৌখিকভাবে জানায় বেইজ গ্রাউটিংয়ের বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা বা অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন পুনঃপরীক্ষা করা দরকার, যাতে টেকসই সেতু নির্মাণ করা যায়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ দ্বারা একটি প্যানেল এক্সপার্ট গঠন করা যেতে পারে।

পরে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হয়। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে বেইজ গ্রাউটিং ও পাইলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রকল্পটির কাজের পরিধি বেড়ে যায়। এজন্য প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, রূপসা রেল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে পাইলিংয়ে বেশকিছু জটিলতা ছিল। সেগুলোর সমাধান হয়ে গেছে। তবে পাইলিংয়ের দৈর্ঘ্য ও বেইজ গ্রাউটিংয়ের জন্য ব্যয় কিছুটা বেড়ে গেছে। সেটার অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উল্লেখ্য, খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পটির আওতায় রূপসা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। তবে এ সেতুর মূল অংশ ৭১৬ দশমিক ৮০ মিটার, আর চার দশমিক ৪১৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ)। পুরো সেতুটি স্টিল কম্পোজিট গ্রিডের তৈরি হবে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেতুটি নির্মাণ শেষ করার কথা রয়েছে। যদিও গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণ অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ফলে নির্ধারিত সময়ে এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সুত্র:শেয়ার বিজ, নভেম্বর ২, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.