শিরোনাম

রেলওয়ের বড় কেনাকাটা নিয়ে প্রশ্ন

রেলওয়ের বড় কেনাকাটা নিয়ে প্রশ্ন

আবারও বেশি দামে ইঞ্জিন কিনতে যাচ্ছে রেলওয়ে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদেনে বলা হয়, ৩৬ শতাংশ বাড়তি ব্যয়ে কেনা হচ্ছে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। সরবরাহকারী ঋণে (সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট) ইঞ্জিনগুলো কেনায় অর্থায়নের ব্যবস্থাও করছে হুন্দাই রোটেম। এজন্য উচ্চ সুদ গুনতে হচ্ছে।
ইঞ্জিনগুলো কেনায় হুন্দাই রোটেম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে গতকাল। অথচ ২০১৫ সালে সারা দেশে মিটারগেজ রেলপথ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনো মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণও হচ্ছে না। বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথগুলো বরং পর্যায়ক্রমে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আবদুল মতিন চৌধুরী অবশ্য শেয়ার বিজকে বলেছেন, এটি রেলওয়ের সিদ্ধান্ত নয়। যখন মিটারগেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আছে এবং এর পক্ষে সরকারপ্রধানের নির্দেশনাও রয়েছে, তখন কার স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে বেশি দামে ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
গত বছরও আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি দামে ১ হাজার ৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় ২৫টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কেনে রেলওয়ে। অতিরিক্ত দাম নিয়ে সে সময় প্রশ্ন তুলেছিল খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়। এবার বাড়তি দামে ইঞ্জিন কেনার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি রেলওয়ের সিদ্ধান্ত নয়। প্রতি বছর এভাবে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হচ্ছে, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না; এটি দুঃখজনক। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার দুঃসাহস দেখাচ্ছে কারা, তাও এখন খতিয়ে দেখা উচিত। প্রতিবছরই ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে, অথচ লাভজনক হয়ে উঠতে পারছে না রেলওয়ে। সেটি যেন গুরুত্বই পাচ্ছে না। যখন মিটারগেজ রেললাইন ক্রমে বিলুপ্তির পথে, তখন ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনাই জরুরি ছিল। নিয়ম লঙ্ঘন করে গুরুত্বহীন স্থানে স্টপেজ করা হচ্ছে, জরাজীর্ণ সেতু মেরামত হচ্ছে না, বিভিন্ন রেলস্টেশন অনেকদিন ধরে বন্ধ, ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় কালোবাজার কিংবা পানদোকানে এবং রেলের সার্ভারে ত্রুটির কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ প্রভৃতি নিরসনে কিন্তু কর্তৃপক্ষের আগ্রহ নেই। অহেতুক আর বড় কেনাকাটায়ই যেন তাদের আগ্রহ। একবার তো এমন হয়েছে, প্রকল্প শেষের ৫ বছরে জানা গেল কাজই হয়নি। আর প্রকল্পের আওতায় বড় প্রতিনিধিদলের বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও আসবাব কেনায় প্রতি বছর বিনিয়োগ বাড়ে, ব্যয় বাড়ে; কিন্তু রেলের গতি বাড়ে না।

যথাযথ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে জনবান্ধব ও লাভজনক করা উচিত রেল কর্তৃপক্ষের। সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও অনিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় ঠিকই ‘যোগ্যতা’র পরিচয় দিচ্ছেন তারা। বড় কেনাকাটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকটি ধাপ কিন্তু অতিক্রম করতে হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি কিংবা ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিও দায়িত্ব পালন করেছে। সুতরাং বারবার বাড়তি দামে ইঞ্জিন কেনার দায় এড়াতে পারে না এ দুই কমিটি। এভাবে ইঞ্জিন কেনায় রাষ্ট্র তথা জনগণের অর্থ অপচয়ের (আত্মসাতের পর্যায়েই পড়ে) সংস্কৃতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।

সুত্র:শেয়ার বিজ, অক্টোবর ১১, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.