শিরোনাম

করোনার ধাক্কা সামলে রেলের আয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ

করোনার ধাক্কা সামলে রেলের আয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ

ইসমাইল আলী: করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০১৯-২০ অর্থবছর টানা ৬৯ দিন বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। এরপর কিছু ট্রেন চালু হলেও অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলে। করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরও প্রায় তিন মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বাকি সময়ের বেশিরভাগই আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলেছে ট্রেন। এতে রেলের যাত্রী পরিবহনে বড় ধরনের ধস নামে। তবে করোনার সে ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠেছে রেলওয়ে।

২০২১-২২ অর্থবছর স্বাভাবিক নিয়মেই পুরো আসনের যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করে। তবে বন্ধ ছিল আসনের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি। এছাড়া করোনার কারণে বন্ধ হওয়া বেশকিছু লোকাল ট্রেন এখনও চালু হয়নি। এরপরও গত অর্থবছর রেলের আয় বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। এ সময় ট্রেনে যাত্রী পরিবহন বাড়লেও পণ্য পরিবহন কিছুটা কমেছে। তবে আয় বেড়েছে দুই খাতেই।

সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছর রেল মোট আয় করেছে এক হাজার ৪৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর আগের (২০২০-২১) অর্থবছর সংস্থাটির আয় ছিল এক হাজার ১৬৬ কোটি সাত লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর রেলের আয় বেড়েছে ৩০০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রেলের ইতিহাসে গত অর্থবছর ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আয় হয় ২০১৭-১৮ অর্থবছর, এক হাজার ৬২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

যদিও রেলের গত অর্থবছরের আয় করোনা সংক্রমণের আগের তুলনায় এখনও কমই রয়েছে। কারণ ২০১৮-১৯ অর্থবছর রেলের আয় ছিল এক হাজার ৫৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। তবে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০১৯-২০ অর্থবছর তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ করোনার কারণে পর পর দুই বছর রেলের আয় কমেছে। এক্ষেত্রে কমার হার যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৫১ শতাংশ ও দুই দশমিক ৮৫ শতাংশ।

রেলের আয় বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছর যাত্রী পরিবহনে রেল আয় করে ৮২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছর যা ছিল ৫২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর যাত্রী পরিবহন খাতে আয় বেড়েছে ২৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ৫৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গত অর্থবছর পণ্য পরিবহন থেকে রেল আয় করে ৩৫৪ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছর যা ছিল ৩৫০ কোটি আট লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে বেড়েছে মাত্র চার কোটি ৩১ লাখ টাকা বা এক দশমিক ২৩ শতাংশ।

গত অর্থবছর ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হয় পাঁচ কোটি ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার। ২০২০-২১ অর্থবছর এ সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৬৮ লাখ ৯৮ হাজার। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণ কমায় গত অর্থবছর ট্রেনে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে এক কোটি ৯৫ লাখ ৫৬ হাজার। তবে গত অর্থবছর রেলপথে পণ্য পরিবহন কমেছে। এক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছর ট্রেনে পণ্য পরিবহন করা হয় ৫৩ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছর যা ছিল ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেলপথে ভারত থেকে পণ্য আমদানি অনেক বাড়ে। দুই দেশের মধ্যে ট্রাক চলাচল দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ওই সময় খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল ছাড়াও অক্সিজেন ভারত থেকে রেলপথে আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে করোনা সংক্রমণ করায় সড়কপথে পণ্য পরিবহন বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে রেলে।

তথ্যমতে, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। তবে কভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন ছিল সাধারণ ছুটি। এর দুই দিন আগে ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। এরপর ৩১ মে থেকে পর্যায়ক্রমে কিছু ট্রেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চালু করা হয়। তখন দুই আসনের বিপরীতে একজন করে যাত্রী পরিবহন করা হতো।

একই অবস্থা ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরও। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গত বছর ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। প্রথমে ১০ দিন শিথিল থাকলেও পরবর্তীতে বিধিনিষেধ কঠোর করা হয়। তবে ৫ এপ্রিল থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল, যার প্রভাব পড়ে রেলের আয়ে। এছাড়া বাকি সময়ের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলে ট্রেন। তবে সে বিধিনিষেধ গত অর্থবছর তুলে দেয়া হয়। এতে রেলপথে যাত্রী পরিবহন অনেক বেড়েছে।

যদিও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত আগস্টে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন একাধিক অনুষ্ঠানে বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাস-ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধিতে জনগণের মাঝে এমনতিইে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবে অসম্মতি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের শেষ দিকেও একবার ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। সে সময় উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হলে তারা ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি না পাওয়ায় সে সময়ও ভাড়া বৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনার সংক্রমণের সময় দুই অর্থবছর দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে চালু হলেও আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলত ট্রেন। এর প্রভাব পড়েছিল রেলের আয়ে। তবে করোনার প্রভাব সীমিত হয়ে আসায় গত অর্থবছর অর্ধেক যাত্রী চলাচলের বাধা তুলে দেয়া হয়। এতে রেলের আয় বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে প্রায় ২৬ মাস বন্ধ ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী দুটি মৈত্রী ট্রেন। গত অর্থবছরের শেষ দিকে তা পুনরায় চালু করা হয়েছে। তবে এখনও কিছু লোকাল ট্রেন বন্ধ আছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো চালু করা হবে। এতে আগামীতে রেলের আয় আরও বাড়বে।

রেলের আয় বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত অর্থবছর রেলের জমি ভাড়া থেকে আয় হয়েছে ৮০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর এ খাতে আয় ছিল ৬৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এছাড়া গত অর্থবছর রেলের স্ক্র্যাপ বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, আগের অর্থবছর যা ছিল ৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর পার্সেল পরিবহন থেকে গত অর্থবছর রেল আয় করে ১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, তার আগের অর্থবছর যা ছিল ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

এর বাইরে টেলিকম, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাত থেকে আয় মোটামুটি অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব খাতে গত অর্থবছর রেল মোট আয় করে ২৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর এসব খাতে রেলের আয় ছিল মোট ২৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছর রেলওয়ে আয় করে এক হাজার ৩০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছর এক হাজার ৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর আগে রেলের আয় ছিল হাজার কোটি টাকার নিচে।

সূত্র: শেয়ার বিজ,  ১ অক্টোবর ২০২২


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

2 Trackbacks & Pingbacks

  1. click here to read
  2. try these out

Comments are closed.