শিরোনাম

৮৮ লেভেল ক্রসিংয়ের ৬৮টিই অরক্ষিত

৮৮ লেভেল ক্রসিংয়ের ৬৮টিই অরক্ষিত

নিউজ ডেস্ক: রাজবাড়ীতে তিনটি রেলপথের ৮৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অধিকাংশই অরক্ষিত। এসব লেভেল ক্রসিং একেকটি মৃত্যুফাঁদ! মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১০ মাসে অন্তত ১৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর জামালপুর ইউনিয়নের শোলাকুড়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনজন।

রাজবাড়ীতে দুটি রেল জংশন। এর মধ্যে সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া রেল জংশনটি থেকে সরাসরি ফরিদপুর যাতায়াত করা যায়। আর কালুখালী জংশন থেকে ফরিদপুর হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়া সরাসরি রেলপথ রয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দঘাট থেকে রাজশাহী এবং খুলনা যাতায়াত করা যায়। ফলে এ রেলপথে প্রতিদিন প্রচুর ট্রেন চলাচল করে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজবাড়ীর সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে মোট রেলপথ ৮৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন ধরনের লেভেল ক্রসিং রয়েছে: ব্যারিয়ার ও গেটম্যান আছে; ব্যারিয়ার নেই গেটম্যান আছে এবং ব্যারিয়ার-গেটম্যান কোনোটাই নেই— এ রকম মোট ৮৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৮টিই অরক্ষিত।

গোয়ালন্দঘাট থেকে পাংশা উপজেলার মাছপাড়া রেলপথে বৈধ রেলগেট রয়েছে ১৪টি। এখানে ১১টি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছে। পাঁচুরিয়া-বসন্তপুর রেলপথে ছয়টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে একটিতে গেটম্যান নেই। কালুখালী ভাটিয়াপাড়া রেলপথের রাজবাড়ীর অংশে লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১৮টি। এর মধ্যে শুধু চারটিতে ব্যারিয়ার ও গেটম্যান আছে। বাকিগুলোতে কোনোটাই নেই। এছাড়া রেলপথের রাজবাড়ী অংশে কমপক্ষে ৫০টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে, এগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত।

রাজবাড়ী শহরের রেলস্টেশন থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে একটি লেভেল ক্রসিং। এখানে রয়েছে ফ্লাইওভার। কিন্তু এ ক্রসিংয়ের পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে রয়েছে আরেকটি অবৈধ ক্রসিং। এখানে কোনো ব্যারিয়ার নেই। এ গেটের দক্ষিণ পাশেই রয়েছে একটি বিদ্যালয় ও দুই রাস্তার সমাহার। উত্তর দিকে তিন রাস্তার সমাহার। শহরের ব্যস্ততম এলাকা এটি, প্রচুর যানবাহন ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করে। ফলে এখানে দুর্ঘটনাও ঘটে বেশি।

এদিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের পশ্চিম দিকে ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি থেকে গঙ্গাপ্রসাদপুর রেলসেতুর দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এর মধ্যে লেভেল ক্রসিং চারটি, কোনোটিতেই ব্যারিয়ার নেই। এর মধ্যে ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি এলাকার ক্রসিংটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রাস্তা বাঁকা হওয়ায় একেবারে কাছাকাছি না এলে ট্রেন দেখা যায় না। কিছুদিন আগে এখানে গেটম্যান দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যারিয়ার না থাকায় তিনি সামাল দিতে পারছেন না। অনেকে গেটম্যানের সংকেত মানেন না।

এভাবে যেখানে-সেখানে অরক্ষিত বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে রাজবাড়ীতে ট্রেনে কেটে বা যানবাহনে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনাও বেশি। জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সলেমান মোল্যা জানান, গত ১০ মাসে রাজবাড়ী সীমানার মধ্যে ১১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। রেল সড়কে চলাফেরায় সবাইকে আরো বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে রাজবাড়ীর রেলওয়ে বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল হানিফ বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নেবেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কিছু করার আছে কিনা জানতে চাইলে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, রেলওয়ে বিভাগ একটি আইসোলেটেড ডিপার্টমেন্ট। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে জানাব।

সুত্র:বণিক বার্তা, অক্টোবর ২৯, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.