শিরোনাম

রেলে পণ্য পরিবহন, বাড়বে বাণিজ্য


।। নিউজ ডেস্ক ।।
ভারত বাংলাদেশের আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। পার্শ্ববর্তী এই দেশ থেকে বছরে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়। আমদানি পণ্যের একটি অংশ রেলপথে বাংলাদেশে আসে। তবে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রেনগুলো বাংলাদেশে পণ্য নামিয়ে অধিকাংশ সময় খালি অবস্থায় ফিরে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে ১২৮ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছেন। আবার ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাচ্ছে পণ্য। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সিংহভাগ পণ্যই সড়ক পথে রপ্তানি হয়। এতে পণ্য রপ্তানিতে পরিবহন খরচ বেশি হয়। আবার পণ্যের ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ বন্দরে লোড-আনলোডের সময়ও বেশি লাগে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার চাচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে রেলপথে রপ্তানি বাড়াতে। এ জন্য ভারতের সঙ্গে চলমান রেলপথগুলোকে আরও কার্যকর করা, চালু রুটে পণ্য সংরক্ষণসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো, বন্ধ রেলপথ চালু এবং নতুন রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। জানা গেছে, নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে কোচবিহারের হলদিবাড়ি রেল রুট দ্রুত চালু করার উদ্যোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৯টি রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রোহানপুর-সিংহবাদ এবং বিরল-রাধিকাপুর এই চারটি রেলপথ বর্তমানে চালু। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটটি আংশিক চালু। এ ছাড়া শাহবাজপুর-করিমগঞ্জ, বুড়িমারী-চেংরাবান্ধা, মোগলহাট-গিতলদাহ রুট বন্ধ। আখাউড়া-আগরতলা রুট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পঞ্চগড়-শিলিগুড়ি ও ফেনী-বিলোনী রেলপথ চালুর প্রস্তাব রয়েছে।

গত সোমবার এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বন্ধ থাকা রেলপথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। ভারতে রেলপথে রপ্তানি বাড়ানো তারই অংশ। এটি ভবিষ্যৎ নীতি উদ্যোগগুলোর মধ্যে আছে। কারণ, রেলপথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম। সমস্যাও কম হয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশেও রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে রপ্তানি ও আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য সব রেল রুট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে ভারতের নদীয়ার গেদে পর্যন্ত রেল রুটে যাত্রীবাহী ও মালবাহী উভয় ধরনের ট্রেন চলে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ এই রুটে ভারত থেকে তিন হাজার ১৪৭ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে। এ থেকে সরকার ১৭৬ কোটি টাকা শুল্ক্ক পেয়েছে। দৈনিক গড়ে দুই থেকে তিনটি ট্রেন ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসে এই রুটে। একইভাবে দু-তিনটি ট্রেন খালি কনটেইনার নিয়ে ফিরে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এই রুটে সহজে ফেরত ট্রেনে তাদের পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে পারেন। বিশেষ করে খাদ্য ও ইলেকট্রনিকস পণ্য। এই রুটকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট-১ বলা হচ্ছে।

বেনাপোল-পেট্রাপোলও যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন রুট। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই রুটে ভারত থেকে রেলপথে ৭৮৭ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এ থেকে সরকার ২২৯ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এই রুটেও একই ঘটনা ঘটে। ভারতের ট্রেন পণ্য নামিয়ে বেশিরভাগ সময়ই খালি অবস্থায় ফিরে যায়।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রোহানপুর-সিংহবাদ রুটে ভারত থেকে রেলপথে পণ্য আমদানি হয়। প্রধানত ভারত থেকে পাথরের টুকরো (স্টোন চিপস) আমদানি হয়। নেপালের সঙ্গেও এই রুটে রেলপথে সংযোগ রয়েছে। একে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট-২ বলা হয়। রোহানপুরে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় দৈনিক একটির বেশি ট্রেন আসে না। এই রুটের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের পাশাপাশি নেপালে পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে এই রুটে।

বিরল-রাধিকাপুর রুটে ভারত থেকে স্টোন চিপস, বোল্ডার ও জ্বালানি আমদানি হয়। এই রুটেও নেপালের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। কিন্তু বিরলের অবস্থাও রোহানপুরের মতো। পণ্য সংরক্ষণের সুবিধা খুবই কম।

নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে কোচবিহারের হলদিবাড়ি রেল রুট বন্ধ ছিল বহু বছর। গত বছরের ডিসেম্বরে এটি ফের চালু হয়। এই রুটে মৈতালি এক্সপ্রেস নামে যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে। ভুটানে রপ্তানির ক্ষেত্রে এই রুট ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।

মৌলভীবাজারের শাহবাজপুর থেকে আসামের মহিশাসন রুটটি ২০০২ সাল থেকে বন্ধ। এই রুটেও পণ্য আসত ভারত থেকে। বর্তমানে ভারতের এলওসির আওতায় এই রুটের সংস্কার কাজ চলছে। ডুয়েল গেজে রূপান্তর করে এই রুটটিও চালু করা হবে। উত্তর-পূর্ব ভারতে রপ্তানির জন্য এই রুট খুবই উপযোগী। যত দ্রুত সম্ভব এই রুটটি চালুর পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বুড়িমারী-চেংরাবান্ধা রেল রুটও ১৯৬৫ সাল থেকে বন্ধ। এই রুটও বাংলাদেশের ভুটানে রপ্তানি সহজ করতে পারে। এ ছাড়া আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে।

সূত্রঃ সমকাল


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.