শিরোনাম

৩০ বছরে নতুন ওয়ার্কশপ লাগবে ১০টি: ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা (শেষ পর্ব)

৩০ বছরে নতুন ওয়ার্কশপ লাগবে ১০টি: ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা

ইসমাইল আলী:
২০৪৫ সালে ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন অনেক বাড়বে। আর সে চাহিদা মেটাতে ৩০ বছরে ৪৭৪টি ইঞ্জিন, পাঁচ হাজার ১৪৩টি কোচ ও ছয় হাজার ৪৩৯টি ওয়াগন কিনতে হবে। আর সেগুলো মেরামতে প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ১৪টি ওয়ার্কশপ। এজন্য নতুন ১০টি ওয়ার্কশপ নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান চারটি ওয়ার্কশপের সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে হবে। রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে এ সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কারিগরি সহায়তায় মাস্টারপ্ল্যানটি প্রণয়ন করছে সিপিসিএস ট্রান্সকম লিমিটেড ও ই.জেন কনসালটেন্টস লিমিটেড।

তথ্যমতে, বর্তমানে রেলের তিনটি ওয়ার্কশপ ও একটি লোকোশেড রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ ও ঢাকা লোকোশেডে ইঞ্জিনের ছোটখাটো মেরামত করা হয়। আর বড় ধরনের মেরামতের (ওভারহোলিং) জন্য পাঠানো হয় পাবর্তীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায়। এছাড়া সৈয়দপুর ও পাহাড়তলীর দুটি ওয়ার্কশপে যাত্রীবাহী কোচ ও পণ্যবাহী ওয়াগন মেরামত করা হয়। এগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। পাশাপাশি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ আরও কিছু উন্নয়ন করতে হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।

এদিকে নতুন ১০টি ওয়ার্কশপ নির্মাণের সুপারিশও করা হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। এর মধ্যে প্রথম পর্বে (২০১৬-২০২০) দুটি, দ্বিতীয় পর্বে (২০২১-২০২৫) দুটি, তৃতীয় পর্বে (২০২৬-২০৩০) দুটি, চতুর্থ পর্বে (২০৩১-২০৩৫) দুটি ও পঞ্চম পর্বে (২০৩৬-২০৪০) দুটি। এগুলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে খাতটিতে ব্যয় হবে ২৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। তবে শেষ পর্বে (২০৪১-২০৪৫) কোনো ওয়ার্কশপ নির্মাণ করতে হবে না।

প্রথম পর্বে নারায়ণগঞ্জে ইঞ্জিন মেরামতে নতুন ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। আর ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) মেরামতে ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৬৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্বে নির্মাণ করতে হবে রাজবাড়ী

ওয়ার্কশপ। এতে কোচ ও পণ্যবাহী ওয়াগন মেরামত করা হবে। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। আর চট্টগ্রামে নতুন ডিজেল ইঞ্জিন ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় হবে এক হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তৃতীয় পর্বে রাজবাড়ীতে নির্মাণ করতে হবে ডিজেল ওয়ার্কশপ। এতে সম্ভাব্য ব্যয় হবে এক হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। আর ময়মনসিংহে কোচ-ওয়াগন মেরামত ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় হবে দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা।

চতুর্থ পর্বে নির্মাণ করতে হবে পাবর্তীপুরে ট্র্যাকশন মোটর ও রি-উইন্ডিং মেরামত ইউনিট। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮৫ কোটি টাকা। আর ঈশ্বরদী ডেমু মেরামতের পৃথক ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৬৩ কোটি টাকা। এছাড়া পঞ্চম পর্বে চট্টগ্রামে বিদ্যমান কোচ-ওয়াগন মেরামত ওয়ার্কশপটি পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। আর চট্টগ্রামে ডেমু মেরামতে আরেকটি ওয়ার্কশপ নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৬৩ কোটি টাকা।

এদিকে পাবর্তীপুরে বিদ্যমান কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭০ কোটি টাকা। ঢাকার ডিজেল লোকোশেড ওয়ার্কশপ উন্নীত করতে ব্যয় হবে ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া সারা দেশে বিদ্যমান ৯টি ডিজেল লোকোশেডের উন্নয়ন ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যমান পাঁচটি ওয়ার্কশপে ট্রেনিং ইউনিট স্থাপনে ব্যয় হবে ৩৯ কোটি টাকা। আর কারিগরি ও স্টোর বিভাগের ম্যানুয়াল ও কোড উন্নয়নে ব্যয় হবে ৩১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৪০০ ইঞ্জিন, দুই হাজার ৬২৫টি কোচ, ৭৫ সেট ডেমু ও সাড়ে আট হাজার ওয়াগন মেরামতের সক্ষমতা গড়ে তুলতে বলা হয়েছে।

ওয়ার্কশপ নির্মাণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন ছাড়াও ইঞ্জিন-কোচ-ওয়াগন মেরামতে দ্রুত জনবল নিয়োগের তাগিদ দেয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। পাশাপাশি মেরামত খাতে প্রতি বছর পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি ইঞ্জিন মেরামতে সাড়ে সাত লাখ টাকা, এসি কোচ মেরামতে এক লাখ ২০ হাজার, নন-এসি কোচ মেরামতে এক লাখ এবং ওয়াগন মেরামতে ২৮ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.