শিরোনাম

জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শুরু হয়নি নির্মাণকাজ

জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় শুরু হয়নি নির্মাণকাজ

ইসমাইল আলী:
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১০ সালে। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে ২০১৬ সালে ১৯ এপ্রিল প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ৮৭৪ শতাংশ ব্যয় বাড়ে প্রকল্পটির। সে সময় দোহাজারী-কক্সবাজার অংশটি অবশ্যই ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার নির্দেশনা দেয় সরকার। তবে এখনও শুরুই হয়নি রেলপথটি নির্মাণ। এমনকি প্রায় অর্ধেক জমি অধিগ্রহণ এখনও শেষ হয়নি। আবার প্রায় ৮৩ শতাংশ জনগণ ক্ষতিপূরণ বুঝে পায়নি।

রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তার যুক্তিতে ২০১৬ সালে সংশোধনের সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে এ ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবেও রেলপথ নির্মাণে গতি আসেনি।

প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদনকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কিছু সিদ্ধান্ত দেয়। এর মধ্যে প্রথমটি ছিলÑ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার রেলপথ আবশ্যিকভাবে ডিসেম্বর, ২০১৮ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।’ একনেকের দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি ছিল“পর্যটন খাতসহ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ প্রকল্পভুক্ত করতে হবে।” গত বছরই প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি রেলপথটি নির্মাণ ক্ষেত্রে। এখনও নির্মাণকাজ শুরুই করা যায়নি।

সম্প্রতি দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জানানো হয়, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বেসরকারি মালিকানাধীন এক হাজার ৩৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৭২ একর জমি অধিগ্রহণপূর্বক রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। আর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের এক হাজার দুই একরের মধ্যে ৪৮৯ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রেলওয়েকে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৭৬১ একর জমি বুঝে পেয়েছে রেলওয়ে। আরও ৬০৬ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি।
সভায় আরও জানানো হয়, জমি অধিগ্রহণের ফলে চট্টগ্রামে তিন হাজার ২০৫ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪০৫ জনকে। আর কক্সবাজারের তিন হাজার ২০৪ ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে ৭০৭ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অর্থাৎ দুই জেলায় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে যথাক্রমে ১২ ও ২২ শতাংশ। যদিও প্রকল্পটির উন্নয়ন সহযোগী এডিবির ঋণের শর্তমতে, অধিগ্রহণকৃত জমিতে ভৌত নির্মাণকাজ শুরুর আগেই জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
ছয় হাজার ৪০৯ ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে এক হাজার ১১১ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অবশিষ্ট পাঁচ হাজা
র ১৯৮ জন বা ৮২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্তকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদানে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও এক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। জমির ক্ষতিগ্রস্তদের মামলার কারণে ক্ষতিপূরণ প্রদান বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে জেলা প্রশাসন জমি হস্তান্তর করলেও তাতে ভৌত নির্মাণকাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
এদিকে কক্সবাজার জেলায় ১৬৫ দশমিক ১১ ও চট্টগ্রাম জেলায় ৪২ দশমিক চার একর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে। ফলে ওই বনভূমি ডি-রিজার্ভের (গাছ কাটার) লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে গত বছর আগস্টে ও চলতি বছর মার্চে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার ওই বনভূমি ডি-রিজার্ভের জন্য তাগিদপত্র প্রেরণ করা হয়। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ওই বনভূমি ডি-রিজার্ভে কোনোরূপ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এর বাইরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত তিন সংস্থার ২১ একর জমি দরকার। এজন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন দফতরের নির্দেশনা মোতাবেক গত মে মাসে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আরও জটিলতা রয়েছে বলে পিআইসি সভায় জানানো হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় দুটি লটেই রেলপথটির জন্য নির্ধারিত অ্যালাইনমেন্টের একাধিক স্থানে বিভিন্ন ক্ষমতার (যথা-১১, ৩৩ ও ১৩২ কেভি) বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন রয়েছে। এসব সঞ্চালন লাইন স্থানান্তরে প্রকল্প দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে প্রাথমিক প্রাক্কলনে দেখা যায়। যদিও প্রকল্পটিতে এ খাতে মাত্র ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন স্থানান্তর বেশ সময়সাপেক্ষ। তবে জরুরি ভিত্তিতে এ লাইনগুলো স্থানান্তর করা না হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। বিষয়গুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুতই জমি অধিগ্রহণ সমস্যা সমাধানপূর্বক প্রকল্পটির ভৌত নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে।

সুত্র:শেয়ার বিজ, নভেম্বর ২৪, ২০১৮,


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.