শিরোনাম

অফিস করছেন অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী, ৫০ কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ দুদকে


।। রেল নিউজ ।।
প্রায় ২০ মাস আগে অবসরে যাওয়ার পরও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের সাবেক ভূসম্পত্তি বিভাগের এক কর্মচারী এখনও নিয়মিত অফিস করছেন। এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ভূসম্পত্তি বিভাগের কৃষি জমির ইজারা, লাইসেন্স পরিবর্তন, খাজনা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে মানুষের কাছ থেকে অন্তত ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)

এদিকে অবসরে যাওয়া কর্মচারীর এভাবে অফিস করার ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও নকশা পাচারের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগের একাধিক কর্মচারী।

অভিযুক্ত এ রেল কর্মচারীর নাম নূর সৈয়দ। তিনি রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্ব বিভাগের ভূসম্পত্তি বিভাগের ট্রেসার ছিলেন। গত ৪ জুলাই প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বরাবরে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল করিম মজুমদার। পরে এ অভিযোগের অনুলিপি রেল মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নূর সৈয়দ দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চাকরি করেছেন রেলওয়ের পূর্বের ভূসম্পত্তি বিভাগের ট্রেসার পদে। অবসরে যাওয়ার একদিন আগেও তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ওই বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এস্টেট বিভাগের কৃষি জমির সকল দায়িত্ব পালন করতেন ট্রেসার নূর সৈয়দ। |
রেলওয়ের আওতাধীন চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলার সমস্ত কৃষি জমি তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। অর্থের বিনিময়ে কৃষি লাইসেন্স বানিয়ে এসব জমি বিভিন্ন মানুষকে ইজারা দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। আর এ দায়িত্ব পাওয়ার পর কৃষি ভূমির নামজারি, নাম পরিবর্তন, ভূমির খাজনা পরিবর্তন ও কৃষি লাইসেন্স করানো নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৫০ কোটি টাকা।

আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলের কৃষি জমি, মৎস্য চাষ ভূমি ও নার্সারি করার সমস্ত রেলের জায়গার নকশা চিহ্নিতের পর ইজারা ফাইল তৈরি করতেন নূর সৈয়দ। এছাড়া তিনি নামে-বেনামে, স্ত্রী ও সন্তানদের নামেও গড়েছেন সম্পদ। চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে একাধিক প্লট ও ব্যাংক ব্যালেন্সও।

এদিকে চট্টগ্রাম রেলের এক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেলওয়ে পূর্ব ভূসম্পত্তি বিভাগে মোট কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা ৫৫ জন থাকার কথা হলেও রয়েছে মাত্র ১৮ জন। অভিজ্ঞ লোক না থাকায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে কর্তৃপক্ষ তাকে (নূর সৈয়দ) দিয়ে নিয়মিত অফিসের কাজ করাচ্ছে। তবে তিনি বিভাগের কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি।’

অবসরের পরও অফিস করার বিষয়টি স্বীকার করে নূর সৈয়দ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষ ডাকলে অফিসে এসেই কাজ করে দিই। ভূমির নকশার কাজসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমি করতাম। এখানে কর্মরত বেশিরভাগই অনভিজ্ঞ। যার ফলে আমাকে এসব কাজের সমাধান করতে ডাকা হয়।’

তিনি বলেন, ‘অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। চট্টগ্রাম শহরে আমার কোনো প্লট নেই। রেলের ইজারাকৃত কৃষি জমি নিয়েও কোনো অনিয়ম করিনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের (পূর্ব) বিভাগের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর অফিসে কাজ করার সুযোগ নেই। তাকে যে কোনো কাজে হঠাৎ ডাকা যেতে পারে। কিন্তু তাকে দিয়ে অফিসের পুরনো কাজ নিয়মিত করানো অন্যায়। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে দেওয়া স্পেসিফিক অভিযোগগুলো আমাকে দেন, আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’

সূত্রঃ চট্টগ্রামপ্রতিদিন


Comments are closed.