শিরোনাম

অতিরিক্ত ১৭২ কোটি টাকা চায় চীনা ঠিকাদার

অতিরিক্ত ১৭২ কোটি টাকা চায় চীনা ঠিকাদার

ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় ৯৭ শতাংশ শেষ। আগামী জুনেই সেতুটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পদ্মা সেতুতে ট্রেন লাইন স্থাপনের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। বরং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথ নির্মাণকাজ। এতে আগামী ডিসেম্বরের আগে সেতুটিতে ট্রেন চালানো শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই।
যদিও সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে একই দিনে সেতু ও ট্রেন লাইন উদ্বোধনের নির্দেশনা ছিল। এজন্য মাওয়া-ভাঙ্গা অংশটি আগে নির্মাণ শেষ করার কথা ছিল। তবে জুনের মধ্যে ওই অংশের কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত দুই কোটি ডলার বা ১৭২ কোটি টাকা চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিআরইসি)। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্রমতে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগের কাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির ৯৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে বাস্তবে ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম করোনা সংক্রমণ। এতে ২০২০ ও ২০২১ সালে দুই দফা বন্ধ থাকে প্রকল্পের কাজ। যদিও করোনার ক্ষতি পুষিয়ে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। এজন্য ঠিকাদারকে সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতেও বলা হয়েছে।
এদিকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশন সম্প্রতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে আইএমইডি প্রতিনিধিদল। এর ভিত্তিতে প্রণীত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর অক্টোবরে প্রকল্প অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে আইএমইডি। সে সময় কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল-ব্যাকআপ প্ল্যান হিসেবে রেল স্থাপনের কাজের গতি আরও বৃদ্ধির জন্য ঠিকাদারের জনবল, নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত ইক্যুইপমেন্টস, মেশিনারি বৃদ্ধি করা যেতে পারে, যাতে করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায় এবং বর্তমান সরকারের ডে-ওয়ান কৌশল প্রতিপালন করে মাওয়া-ভাঙ্গা সেকশনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে ট্রেন চালানো যায়। এ বিষয়ে রেলওয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
ওই সুপারিশের বিষয়ে রেলওয়ে জানায়, ব্যাকআপ প্ল্যান তৈরির জন্য সিআরইসিকে চিঠি দেয়া হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, অতিরিক্ত দুই কোটি ডলার (১৭২ কোটি টাকা) প্রদান করা হলে জনবল, নির্মাণ সামগ্রী ও মেশিনারি বৃদ্ধি করে ডে-ওয়ান স্ট্র্যাটেজি পূরণ করা যাবে। অর্থাৎ পদ্মা সেতুর চালুর প্রথম দিন ট্রেন চালানো যাবে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু মেইন লাইন নির্মাণ করা সম্ভব হবে। সিগন্যালিং সিস্টেম, লুপ লাইন, ভাঙ্গা জংশন স্টেশন ও শিবচর স্টেশন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে না।
অপরদিকে গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-চীন সরকারের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের ১৫তম বৈঠকে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পটির আওতায় অগ্রাধিকারভুক্ত সেকশন ছিল মাওয়া-ভাঙ্গা। এ অংশটি ৯১৩ দিনে নির্মাণের কথা ছিল। তবে এক হাজার ২৭৪ দিন পেরুলেও বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া সেকশনটি নির্মাণের কথা ছিল এক হাজার ৩৬৬ দিনে। এ পর্যন্ত ওই অংশটির কাজ হয়েছে ৫৩ শতাংশ। আর ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর পর্যন্ত সেকশনটি এক হাজার ৬৪৩ দিনে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত ওই অংশের কাজ হয়েছে ৪৮ শতাংশ। এছাড়া যাত্রীবাহী কোচ কেনার অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ।
ঢাকা-মাওয়া ও মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এর কারণে মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজে চীনা দক্ষ জনবল নিয়োগ করেনি। পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমিক এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রকৌশলী ও সেফটি অফিসারও প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিয়োগ করেনি কোম্পানিটি। এছাড়া ভাঙ্গা-যশোর অংশে ব্যাচিং প্ল্যান্ট ও কনক্রিট ট্র্যাক নেই। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সিআরইসিকে মেশিনারিজ ও ইক্যুইপমেন্টের সংস্থান বাড়ানোর জন্য বারবার তাগাদা দিলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না কোম্পানিটি।
জনবল ছাড়াও প্রকল্পটিতে রয়েছে জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত সমস্যা। যদিও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন বিলম্বের জন্য জমি অধিগ্রহণ বিলম্বকেই দায়ী করেছে সিআরইসি।
জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, সিআরইসি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, যারা বাংলাদেশের ফার্¯¡ ট্র্যাকভুক্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। তাই আশা করা যায়, প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন জনবল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগ করবে, যাতে সিআরইসির সুনাম বজায় থাকে। এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংস্থান করা ও সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে সিআরইসিকে নির্দেশনা দিতে চীন সরকারকে বৈঠকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যদিও চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে শেষ করার জন্য সিআরইসি’কে সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তথ্যমতে, প্রকল্পটির আওতায় ১৬৯ কিলোমিটার মূল রেলপথ ছাড়াও ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ লাইন ও তিন কিলোমিটার ট্রিপল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার এলিভেটেড (উড়াল) রেলপথ, ৫৮টি মেজর ও ২৭৪টি মাইনর সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ২৯টি লেভেল ক্রসিং গেট, ১৪টি স্টেশন নতুন নির্মাণ ও ছয়টি আধুনিকায়ন এবং ১৭টি স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুই হাজার ৪৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ১০০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা (৪৯৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার)। আর প্রকল্পটির পরামর্শক ব্যয় এরই মধ্যে আরেক দফা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া নির্মাণ বিলম্বের কারণে ব্যয় আরও বাড়বে। জমি অধিগ্রহণেও ব্যয় বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় ৪৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র:শেয়ার বিজ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.