শিরোনাম

রেলের প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যাচ্ছে চীন!

রেলের প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যাচ্ছে চীন!

প্রিন্ট করুন

ইসমাইল আলী: ২০১৬ সালের অক্টোবরে দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে রেলের ৫টি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে বাংলাদেশ ও চীন। এর মধ্যে শুধু পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে দেশটি। অন্য কোনো প্রকল্পে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না চীন। এমনই একটি প্রকল্প ধীরাশ্রম আইসিডি (অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো)। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকার পরও প্রকল্পটিতে চীনের ঋণ মিলছে না।

গতকাল অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে আখাউড়া-সিলেট ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পেও ঋণ বাতিল করেছে চীন।

সংসদীয় কমিটির সভায় গতকাল জানানো হয়, ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রথম প্রকল্পটির আওতায় জমি অধিগ্রহণ ও পূবাইল-ধীরাশ্রম সংযোগ রেলপথ নির্মাণ। এ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪৭৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে। আর দ্বিতীয় প্রকল্পটি হলোÑমূল আইসিডি নির্মাণ। এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সভায় জানানো হয়, ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণ প্রকল্প চীন ও বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষরিত ‘স্ট্রানদেনিং ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ক্যাপাসিটি করপোরেশন’ শীর্ষক এমওইউ’র অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের অর্থায়ন প্রাপ্তির জন্য ২০২০ সালের ৮ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) অনুরোধ করা হয়। তবে প্রকল্পটিতে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নে চীনের অর্থায়ন পাওয়া যায়নি।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ছাড়া জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পগুলোয় অর্থায়নের বিষয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে নেতিবাচক মতামত পরিলক্ষিত হয়েছে। পরবর্তীতে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ধীরাশ্রম আইসিডি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায়। গত বছর কোম্পানিটি কারিগরি প্রস্তাবনা জমা দিলেও আর্থিক প্রস্তাব দেয়নি।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও ড্রাফট বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। এডিবি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ দিতেও আগ্রহ দেখিয়েছে। তাই এডিবির অর্থায়নের জন্য রেলওয়ে থেকে প্রকল্পটির প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, শুধু ধীরাশ্রম আইসিডিই নয়, এর আগে আরও দুইটি প্রকল্পে ঋণ প্রদান থেকে সরে গেছে চীন। এগুলো হলোÑআখাউড়া-সিলেট বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করা। বর্তমানে প্রকল্প দুইটির জন্য বিদেশি অর্থায়ন খোঁজা হচ্ছে। এজন্য ইআরডিতে পিডিপিপিও পাঠিয়েছে রেলওয়ে। গত মাসে ইআরডিকে এ-সংক্রান্ত পৃথক দুটি চিঠিও দেয়া হয়েছে।

আখাউড়া-সিলেট বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২১ মার্চ পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটির পিডিপিপি অনুমোদন করেন। সে সময় প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৬১০ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয় ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল। সে সময় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয় কমানো হয়। সে সময় এ ব্যয় কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৫০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে এ ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাজি হয়নি চীনা ঠিকাদার। ফলে চীন প্রকল্পটির অর্থায়ন থেকে সড়ে দাঁড়ায়। এতে চীনের পরিবর্তে বিকল্প অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে পিডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটির সুপারিশকৃত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

এদিকে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্প প্রসঙ্গে পৃথক চিঠিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটির পিডিপিপি অনুমোদন করেন। সে সময় প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল সাত হাজার ২৯৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয় ২০১৮ সালের চার নভেম্বর। সে সময় এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটির মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয়ও কমানো হয়। সে সময় এ ব্যয় কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে এ ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাজি হয়নি চীনা ঠিকাদার। ফলে চীন প্রকল্পটির অর্থায়ন থেকে সড়ে দাঁড়ায়। এতে চীনের পরিবর্তে বিকল্প অর্থায়নে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে পিডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যয় পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ কমিটির সুপারিশকৃত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। উভয় প্রকল্পের জন্যই বিদেশি বিনিয়োগ খুঁজতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করা হয় চিঠিতে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখিয়ে এডিবি। সংস্থাটির সঙ্গে চলতি সপ্তাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তাই এডিবির ঋণেই আইসিডিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। আর জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা) ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে আখাউড়া-সিলেট বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পে ঋণ দিতে বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে তারা অর্থায়ন এখনো নিশ্চিত করেনি।

সূত্র: শেয়ার বিজ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.