শিরোনাম

‘ম্যাঙ্গো ট্রেনে’ আম যাচ্ছে নানা গন্তব্যে

‘ম্যাঙ্গো ট্রেনে’ আম যাচ্ছে নানা গন্তব্যে

নিউজ ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম পরিবহনে এ মৌসুমে ভালো সাড়া ফেলেছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। পুরো এক মাসে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ৫৫২ টন আম বহন করা হয়েছে। যারা এ ট্রেনে আম পাঠান, তারা বলছেন, ট্রেনে আম পাঠাতে ব্যয় অনেক কম। কারণ ৪০ কেজি আম কুরিয়ারে পাঠাতে খরচ হয় ৪৮০-৬০০ টাকা। কিন্তু ট্রেনে শ্রমিক খরচ পড়ে মাত্র ৭২ টাকা। এছাড়া আম নষ্ট হওয়ারও তেমন কোনো ভয় নেই। জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে আমসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ গত ২৭ মে থেকে চালু করে, আম মৌসুম জুড়ে রেলওয়ের এই সেবা চলবে। উদ্বোধনের পর ট্রেনটি এক মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীসহ ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ৫৫২ টন আম পরিবহন করেছে এবং আয় করেছে ৭ লাখ ২১ হাজার ৪২৬ টাকা। অনলাইনে আমের ব্যবসায়ী আবদুল আহাদ জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ১২ টন আম ট্রেনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন তিনি। খরচ যেমন কম, তেমনি আম নষ্ট হচ্ছে না। তিনি বলেন, কুরিয়ারে চাপাচাপি করে মালামাল নেওয়ার কারণে বেশির ভাগ আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সময়মতো প্রাপকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। পাশাপাশি ঝুড়ি এবং কার্টুন থেকে আম চুরি হয়ে যায়। মেহেদি হাসান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ট্রেনে খরচও কম, অন্যদিকে কুরিয়ারে আম পাঠানোর পর বাড়তি চাপের মধ্যে থাকতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে ব্যক্তি পর্যায়ে আম পাঠাতে আসা সাজেদুল হক জানান, তিনি এর আগে কুরিয়ারে ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে দুই ঝুড়ি আম পাঠিয়েছিলেন। কুরিয়ার সার্ভিসকে বারবার ফোন করে জানতে হয় প্রাপক আম পেয়েছে কি না, এটা বাড়তি চাপ। এবার তিনি প্রথম ট্রেনে আম পাঠালেন ঢাকা ও রাজশাহীতে। খরচও কম আর আম যাচ্ছে দিনেরটা দিনে। আর ৪০ কেজিতে সর্বোচ্চ কুলিসহ খরচ পড়েছে ৭২ টাকা। ফলে এবার অনেকেই ট্রেনে আম পাঠাতে উত্সাহী হতে দেখা গেছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ট্রেনটি ছেড়ে যায়। রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছায় বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে। ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ৫টা ৫০ মিনিটে। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায় রাত ২টায়। আম নামিয়ে রাতেই ট্রেনটি আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতি কেজি ১ টাকা ৩১ পয়সা ভাড়ায় পরিবহন করা হয় আমসহ বিভিন্ন পণ্য। তবে প্রতি ২০ কেজি আমের জন্য ১০ টাকা করে কুলি খরচ নেওয়া হয়। এ ট্রেন মালামাল তোলা ও নামানোর জন্য মোট ১৯ স্টেশনে থামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনুরা, রহনপুর, কাকনহাট, রাজশাহী, হরিয়ান, সরদহ, আড়ানী, আবদুলপুর, লোকমানপুর ও আজিমনগর স্টেশন থেকে আম বুকিং দেওয়া যায়। নামানো শুরু হয় বঙ্গবন্ধু পশ্চিম স্টেশন থেকে। তারপর টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, তেজগাঁও, বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট ও সব শেষে কমলাপুর স্টেশনে আম নামানো হয়। নির্ধারিত স্টেশনগুলোর জন্য ওয়াগনে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া থাকে। বিশেষ এই ট্রেনটি প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, আমগুলো যত্ন সহকারে ওয়াগনে ওঠানো হয়। এতে আম নষ্ট হয় না। ফলে ব্যবসায়ীসহ ভোক্তাদের এ ট্রেনে আম পাঠানোর আগ্রহ বেড়েছে। তিনি আরো জানান, গত বছর মৌসুম জুড়ে আম বহন হয়েছিল ১৬৭ টন আর আয় হয়েছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৮ টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫২ টন আম বহন হয়েছে এবং আয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। সময় তো আরো রয়েছে।

সূত্র:ইত্তেফাক, ০৮ জুলাই, ২০২১ 


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.