শিরোনাম

ছয় বছরে নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র ছয় শতাংশ

ছয় বছরে নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র ছয় শতাংশ

নিউজ ডেস্ক:  রাজধানীতে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ৮০টি ট্রেন, যা ঢাকা-টঙ্গী রুটে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের এ পথে যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন ট্রেনকে টঙ্গীর বাইরে সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা-টঙ্গী রেলপথ তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও ছয় বছরে অগ্রগতি মাত্র ছয় শতাংশ, যদিও পাঁচ বছরে রেলপথটি নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা ছিল।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই। ফলে পৃথক নকশা প্রণয়নও অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আর শুরুতে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল তাও ছিল রেলওয়ের নিজস্ব সমীক্ষার ভিত্তিতে। এসব ত্রুটির কারণে ছয় বছরেও ঢাকা-টঙ্গী চার লেন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরুই করা যায়নি। পাশাপাশি বাধ্য হয়ে এক বছরের মধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হয়েছে।

২০১২ সালে শুরু করা প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে ২০১৭ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। পরে এ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর করা হয়। তবে প্রায় ছয় বছর পেরুলেও প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ছয় শতাংশ। এদিকে বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যদিও ২০১২ সালে এ ব্যয় ধরা হয় ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ হিসেবে ভুল পরিকল্পনায় ব্যয় বেড়ে গেছে ২৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।

প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল ৬৯৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাকি ১৫২ কোটি ৭০ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে ভারত ঋণ দিচ্ছে ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ও সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ২০৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

এদিকে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে একনেকে অনুমোদনের আগেই ভারত সরকারের অনুমোদন নিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ দরপত্রেও সম্ভাব্যতা যাচাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০১২ সালে ২৪ এপ্রিল আহ্বান করা দরপত্রে ভারতের তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ২০১৩ সালের জুনে চূড়ান্ত প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। দরপত্র চূড়ান্ত করতে গিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা না থাকার বিষয়টি নজরে আসে। এতে বাধ্য হয়ে বাতিল করা হয় দরপত্র।
পরবর্তীকালে প্রকল্পটি সংশোধনপূর্বক নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নে পৃথক দরপত্র আহ্বান করা হয়। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের ড্রাফট ফাইনাল রিপোর্ট গত বছর মার্চে জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। আর প্রকল্পটির নির্মাণকাজের জন্য চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয় গত বছর আগস্টে। বর্তমানে এ অংশের দরপত্র মূল্যায়নাধীন রয়েছে। আর সিগন্যাল কাজের জন্য পৃথক দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। সব মিলিয়ে মার্চ পর্যন্ত অগ্রগতি ছয় শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি মাত্র শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, প্রকল্প পুনর্গঠনের পর নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। বিস্তারিত নকশা প্রণয়নও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর নতুন দরপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ দুটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে রয়েছে নির্মাণ ও দ্বিতীয় অংশে রয়েছে সিগন্যালিং। প্রথম অংশের ঠিকাদার দ্রুতই নিয়োগ করা হবে। এর পর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। আর দ্বিতীয় অংশের দরপত্র শিগগিরই আহ্বান করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির আওতায় সিগন্যালিংসহ ঢাকা-টঙ্গীর মধ্যে বিদ্যমান ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সমান্তরাল প্রায় ৪৯ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ নতুন দুটি লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মূল লাইন ৪৫ কিলোমিটার ও প্রায় চার কিলোমিটার লুপ লাইন। এছাড়া টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১২ দশমিক ২৮ কিলোমিটার নতুন একটি ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নতুন কমিউটার বা আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকা শহরের যানজট নিরসন এবং পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নিরাপদ, উন্নত ও দ্রুত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা সম্ভব হবে।

সুত্র:শেয়ার বিজ,মে ১, ২০১৮

About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.