শিরোনাম

আখাউড়া-লাকসাম: সীমান্তে আপত্তিতে আটকে আছে রেলপথ নির্মাণ কাজ


।। রেল নিউজ ।।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আপত্তির কারণে ১৫ মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা স্টেশন এলাকা এবং সালদা নদীতে রেল সেতু ও স্টেশন এলাকায় রেলপথ নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই দুই এলাকা মিলিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গায় রেলপথ নির্মাণ করতে না পারায় পুরো পথে ট্রেন চলাচলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রেলের এই নির্মাণকাজ হওয়ায় আপত্তি তুলেছে বিএসএফ। যদিও এখানে আগে থেকেই মিটার গেজ রেললাইন আছে। এর পাশে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেলপথ করতে চায় বাংলাদেশ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এখন এই পথে একটি সিঙ্গল লাইন মিটার গেজ রেলপথ রয়েছে। নতুন পথ নির্মাণ হলে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলাচল করতে পারবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার মধ্যে ৭২ কিলোমিটার নতুন ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ শেষ হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পুরো রেলপথটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরিত হবে। এরই মধ্যে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আখাউড়া থেকে লাকসাম নতুন রেলপথের লাকসাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই ২৫ কিলোমিটার পথে ট্রেন চলাচল করছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সেপ্টেম্বরের প্রকল্প অগ্রগতির প্রতিবেদনে বলা হয়, সালদা নদী ও কসবা স্টেশন এলাকায় বিএসএফের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে।

বিএসএফের আপত্তির কারণ ও প্রকল্পের কাজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় বিএসএফ এই আপত্তি জানিয়েছে। এমন নয় যে আমরা একেবারে নতুন রুট তৈরি করছি। ওই পথে ১৮৯০ সাল থেকেই একটি রেলপথ আছে। এই রেলপথ দিয়ে এখনো আমাদের ট্রেন চলাচল করে। আমরা শুধু আগের মিটার গেজের পাশে এখন ডুয়েল গেজ রেললাইন তৈরি করছি। ’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের আরেক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই রেলপথ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ভারত সফরে রেল নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন অংশ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদেরও কিছু দ্বিমত আছে, তাদেরও আছে। তার মধ্যে এটি একটি। অন্য সমস্যাগুলোর সঙ্গে কসবা ও সালদা পয়েন্টও ভারত যুক্ত করে দিয়েছে। ’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, অন্যগুলোর সঙ্গে এটাকে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভারত বলছে, সবগুলোই একসঙ্গে নির্ধারণ করি। এখন কোথায় কাদের কতটুকু আপত্তি-অনাপত্তি আছে, সেগুলোর ওপর কাজ চলছে। কবে নাগাদ এই সমস্যার নিষ্পত্তি হবে সেটা এখনই বলা সম্ভব না। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে যার কাজ করছে। ’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘একসময় পঞ্চগড়ে পাথর তোলায় ভারতের আপত্তি ছিল, আবার এখন আপত্তি নেই। যেহেতু এটা (রেলপথ) আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প এবং এটা জরুরি, সেই বিবেচনায় আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। ’

বিএসএফের আপত্তির শুরু

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকল্পের নথির তথ্যমতে, বিএসএফের আপত্তির কারণে সালদা নদীর কাছে নির্মীয়মাণ সেতুর নির্মাণকাজে গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে কিছুদিন কাজ চললেও ওই বছরের ১০ জুন থেকে আবার কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কর্মকর্তাদের আলোচনার ভিত্তিতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হলেও ১৩ দিনের মাথায় তা বন্ধ করতে হয়। অন্যদিকে কসবা স্টেশন এলাকায় কখনোই কাজ শুরু করা যায়নি।

কসবা-সালদার সমাধান কেন জরুরি

প্রকল্প সূত্র বলছে, লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজ শেষ হলে আগের চেয়ে ট্রেনে চলাচলে অন্তত ২৫ মিনিট সময় কম লাগবে। এ ছাড়া বর্তমানে এই পথে ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই রুট দিয়ে ৭২ জোড়া ট্রেন চলাচলের সক্ষমতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে মালবাহী কনটেইনার চলাচলেরও সক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়বে।

প্রকল্পের কাজ হয়েছে কত দূর

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নতুন রেলপথ নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ। এর মধ্য প্রকল্পের অধীনে মোট ১৩২.১৭ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করা হবে। পুরো অংশের মধ্যে বাঁধের কাজ ৯১.৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১৮৪.১৬ কিলোমিটার ট্র্যাক লাইনের মধ্যে ১২৮.১২ কিলোমিটার ট্র্যাক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে, যা মোট কাজের ৬৯.৫৭ শতাংশ।

প্রকল্পের আওতায় মোট ২৪টি সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ২০টি সেতুর নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সেতু নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৯০.৫২ শতাংশ। ৪৫টি বক্স কালভার্টের মধ্যে ৩৭টির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পে ১৩টি স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব ভবন নির্মাণের গড় অগ্রগতি ৮৪.৬৭ শতাংশ। প্রকল্পের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ এগিয়েছে ৭০.২৫ শতাংশ।

প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আট মাস

ছয় হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্পের নির্মাণকাজের চুক্তি হয়েছে ২০১৬ সালের ১৫ জুন। ওই সময় থেকেই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের জুনে।

প্রকল্পের পুরো টাকার মধ্যে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে চার হাজার ১১৮ কোটি ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এক হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। আর সরকারের অর্থায়ন থাকছে এক হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ ২২ হাজার টাকা।

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ


2 Trackbacks & Pingbacks

  1. official statement
  2. find here

Comments are closed.