শিরোনাম

২১ মাস বেতন পাচ্ছেন না ১২ গেটম্যান

২১ মাস বেতন পাচ্ছেন না ১২ গেটম্যান

‘একটা নতুন জামার জন্য মেয়েটা অঝোরে কেঁদেছে। বাবা হয়ে শিশুসন্তানের আবদার রাখতে না পারা কত যে কষ্টের, কত যে লজ্জার তা একমাত্র ভুক্তভোগী বাবাই জানেন। বেতনের জন্য বড় স্যারদের দ্বারে দ্বারে ফকিরের মতো ঘুরছি। আশ্বাস তো পাই-ইনি, উল্টো জুটেছে তিরস্কার। দুঃখে-কষ্টে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম। দুই সন্তানের কচি মুখের দিকে তাকিয়ে পারিনি। ঈদের দিন দুনিয়ার সব মানুষ আনন্দ করবে, নতুন জামাকাপড় পরবে। আমাদের তো আর ঈদ নেই, তাই ওই দিন আমরা ১২ গেটকিপার পরিবার নিয়ে থালা হাতে ঈদগাহে অনশনে বসব।’

২১ মাস বেতন না পাওয়ার হতাশার কথা এভাবেই জানালেন ঢাকা বিভাগীয় রেলপথ প্রকৌশল বিভাগের অধীন গাজীপুরের ধীরাশ্রম লেভেলক্রসিংয়ের অস্থায়ী গেটম্যান মামুন মিয়া (৩২)।

মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনিসহ ১২ জন্য অস্থায়ী গেটম্যান গাজীপুরের পুবাইলের মীরেরবাজার ও ধীরাশ্রম লেভেলক্রসিংয়ে কর্মরত রয়েছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এই গেটম্যানদের মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। বরাদ্দ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে গত ২১ মাস ধরে তাঁদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না।

মামুন বলেন, বেতন না পাওয়ায় তাঁরা সংসার চলাচ্ছেন ধার-দেনা করে। তাঁর দুই সন্তানের একজন পঞ্চম ও একজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। টাকার অভাবে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

মীরেরবাজার লেভেলক্রসিংয়ের গেটম্যান মানিক হোসেন জানান, স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা ছয়। তাঁর চাকরির টাকায় সংসার চলে। মেয়ে তৃতীয় ও ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গত ২১ মাসে অন্তত সোয়া লাখ টাকা ঋণ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা সুদে নেওয়া। তাঁরা কবে বেতন পাবেন সেটাও বলছেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ওই দুই লেভেলক্রসিংয়ে ছয়জন করে ১২ জন অস্থায়ী গেটম্যানের বেতন সড়ক ও জনপথ বিভাগ পরিশোধ করে। সময়মতো চিঠি না দেওয়ায় এবং চিঠিতে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ বরাদ্দ দেয়নি। সে কারণে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না।

রেলওয়ের টঙ্গী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, শর্ত অনুযায়ী বেতনের টাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগ অগ্রিম রেলপথ বিভাগকে জমা দিয়ে থাকে। কিন্তু নতুন করে টাকা বরাদ্দ না দেওয়ায় ওই ১২ জনের বেতন ২০১৭ সালের জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি সর্বশেষ গত ৩ মে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী এম ছালামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বরাদ্দ পাওয়া গেলে বেতন দেওয়া হবে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন বলেন, ওই দুই গেটের জন্য রেলওয়ের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১০ বছরের চুক্তি ছিল। ওই চুক্তি ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হয়ে গেছে। ওই সময়ের পর থেকে গেটম্যানদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নয়। তবে চুক্তি সময়ের ২১ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৭ টাকা বকেয়া রয়েছে। গেটম্যানরা তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি ওই টাকা ছাড় করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ঈদের পর ওই টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুত্র:কালের কন্ঠ, ৩ জুন, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

2 Trackbacks & Pingbacks

  1. superkaya88
  2. สล็อตวอเลท

Comments are closed.