আহমেদ সাঈদ বুলবুল : নতুন শিডিউলের পর খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী জনপ্রিয় আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসের যাত্রীসংখ্যা কমতে শুরু করেছে। নতুন শিডিউলের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) সুন্দরবন এক্সপ্রেস আগে রাত সাড়ে ৮টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। আবার একই ট্রেন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসত। খুলনা থেকে ট্রেনটি সময় মতো ছাড়লেও ঢাকা থেকে আধঘণ্টা থেকে কখনো কখনো সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা বিলম্ব হতো। এই ট্রেনে খুলনা-যশোরসহ এ এলাকা থেকে অনেকেই রবিবারসহ সপ্তাহের অন্যান্য দিনে ভোরে ঢাকায় পৌঁছে অফিস করতেন বা অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ সারতেন। নতুন শিডিউলের কারণে ট্রেনটি অনেক দেরিতে ঢাকায় পৌঁছানোতে এ অঞ্চলের মানুষ সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করেছেন। আবার যশোর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত অনেক যাত্রী খুলনায় অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে রাত সাড়ে ৮টায় সুন্দরবনে গন্তব্যের পথে রওনা হতেন। এসব যাত্রীদের একটি বড়ো অংশ নারী ও শিশুরা। ভার্সিটি পড়ুয়া বা কর্মজীবী বহু নারী নিরাপদ বাহন হিসেবে রাত্রিকালীন এই ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করতেন। কিন্তু খুলনা থেকে নতুন শিডিউলে রাত সোয়া ১০টায় ছাড়ার সময় করায় যশোরসহ এ অঞ্চলের যাত্রীরা অতরাত পর্যন্ত অপেক্ষা না করে বিকল্প ব্যবস্থায় ফিরতে শুরু করেন। আর ঢাকাগামী যাত্রী কমতে শুরু করেছে স্বীকার করে খুলনার স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার মোবাইলে ইত্তেফাককে বলেন, রাত সাড়ে ৮টার গাড়ি ১১টা-১২টায় ছাড়ার কারণে এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ট্রেনে যাত্রী কমে যাচ্ছে। তিনি জানান, ৯ জানুয়ারি থেকে রাত সোয়া ১০টায় নতুন শিডিউল হওয়ার পর প্রথম দিন রাত ১১টায়, দ্বিতীয় দিন ১১টা ৫৫, পর দিন রাত সোয়া ২টায় ট্রেনটি খুলনা ছাড়ে। ট্রেন বিলম্বের কারণে অনেক যাত্রী অনলাইনে বা ৮-১০ দিন আগে করা টিকেট ফেরতও দেন।
এদিকে নতুন শিডিউলের আগে সুন্দরবনের ডাউন সময় যশোরে দুপুর সোয়া ২টায় থাকলেও সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে পৌঁছাত। অনেক যাত্রী এসএমএসের মাধ্যমে সময় জেনে খুলনা ফেরার জন্য স্টেশনে আসতেন। অফিস শেষ করেও অনেকে নিয়মিত এই ট্রেনেই খুলনা ও নওয়াপাড়া যেতেন। চমত্কার এ সময় সমম্বয়ে ছেদ পড়েছে নতুন শিডিউলে। গত পাঁচ দিনে সর্বনিম্ন সাড়ে ৬টা থেকে সর্বোচ্চ ১১টারও বেশি বেজেছে সুন্দরবনের যশোর পৌঁছাতে। এজন্য টিকিট বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আহরণও কমে যাচ্ছে। এটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ১৩ জানুয়ারি যশোর স্টেশন থেকে খুলনা অভিমুখী একটি টিকিটও বিক্রি হয়নি। আগাম ক্রয় করা অনেকেই টিকিট ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
যশোর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, নতুন শিডিউলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে বিলম্বে যশোর পৌঁছানোর কারণে বিকালে মহানন্দাই খুলনার দিকে যাওয়ার প্রথম ট্রেন হওয়ার কারণে সবযাত্রী তারাই বহন করে। সুন্দরবন ও রূপসা বিলম্বে আসার কারণে বর্তমানে খুলনা অভিমুখী তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
মোবাইলে পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, এই রুটে নতুন নতুন ট্রেন যুক্ত হওয়ার কারণে নতুন শিডিউল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন শিডিউল যাত্রীদের বিড়ম্বনার কারণ মর্মে প্রশ্ন করা হলে বলেন, খারাপ অনেক কারণেই হতে পারে। কারণের অভাব নেই। পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আর এসব বিষয়ে অপারেটিং বিভাগ বলতে পারবে।
সুত্র:ইত্তেফাক, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০