শিরোনাম

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ নিরস্তের উপায়

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ নিরস্তের উপায়

একটি জলাশয়ের নিকট বসিয়া একদল শিশু ঢিল ছুড়িয়া খেলা করিতেছিল। তাহাতে আহত-নিহত হইতেছিল ওই জলাশয়ে বসবাসকারী শত শত ব্যাঙ। কোনো ব্যাঙের শরীরে ঢিল লাগিলে শিশুরা আরো বেশি উত্সাহী হইত ঢিল ছুড়িতে। অতঃপর জলাশয় হইতে একটি বুড়ো ব্যাঙ উঠিয়া আসিয়া শিশুদের নিকট করজোড়ে বলিল—যাহা তোমাদের নিকট খেলা, তাহা আমাদের নিকট মৃত্যুর সমান। এই মারণখেলা বন্ধ করো।

গল্পটি ইশপের। ইহার সহিত সাদৃশ্য রহিয়াছে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনার। রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করিয়া দেখিয়াছে, চলন্ত ট্রেনে যত পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটিয়াছে তাহার ৮০ শতাংশই শিশুকিশোরদের কাজ। তাহারা ইহার ভয়াবহতা বুঝিতে পারে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত পাঁচ বত্সরে ট্রেনে পাথর ছুড়িয়া দুই সহস্রাধিক জানালা-দরজা ভাঙিবার ঘটনা ঘটিয়াছে। অন্যদিকে গত এক বত্সরে ট্রেনে পাথর ছুড়িবার ঘটনায় আহত হইয়াছেন দুই শতাধিক। সর্বশেষ গত ৫ মে রাতে পদ্মা ট্রেনে পাথরের ঢিলে আহত হয় চার বত্সরের শিশু জিশান ও তাহার মা। শিশুটি এখনো হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ইহার আগে পাথরের আঘাতে মৃত্যু হইয়াছে রেলের টিকিট চেকার শিকদার বায়েজিদ এবং প্রকৌশলী প্রীতি দাসের। রেল কর্তৃপক্ষ মূলত হিমশিম খান—যাহারা ঢিল ছুড়িতেছে, তাহাদের শনাক্ত করিতে। কারণ বেশিরভাগ ঘটনা ঘটিয়া থাকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বা রাতের অন্ধকারে। সারাদেশে দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেলপথ রহিয়াছে। রেলসূত্র হইতে জানা যায় যে, ইহার মধ্যে ২০ জেলার উপর দিয়া চলিবার সময় ট্রেন লক্ষ্য করিয়া পাথর ছুড়িবার ঘটনা বেশি ঘটে। যেইসকল স্থানে ঢিল মারিবার ঘটনা ঘটে এমন ৮০টি স্পটের তালিকা তৈরি করিয়াছে রেল কর্তৃপক্ষ। ওইসব স্পটের স্থানীয় মাতব্বর, চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যদের ধরিয়া এলাকায় একটা সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করিয়াছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাহার পরও এই ঘটনার লাগাম টানা যাইতেছে না। রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোঁড়া হইলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রহিয়াছে। তবে পাথর নিক্ষেপে কাহারো মৃত্যু হইলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রহিয়াছে। যদিও এইসব আইনে এখন অবধি কাহারো শাস্তির নজির নাই। অন্যদিকে, রেলের বিস্তৃত এলাকার সবখানে পুলিশের পাহারারও কোনো সুযোগ নাই। আর ট্রেনে ঢিল ছুড়িয়া মারিলে ট্রেনটি থামাইয়া দুষ্কৃতকে ধরাও সম্ভব নহে।

তাহা হইলে কী উপায়ে ইহার সমাধান সম্ভব? এইক্ষেত্রে আমরা মনে করি, রেলপুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রাখিবার ব্যবস্থা করা যাইতে পারে এবং যেই ৮০টি স্পটে পাথর ছুড়িবার ঘটনা ঘটে বেশি, সেইসকল স্পটে আগে হইতেই অধিক সতর্ক থাকা যাইতে পারে। কেহ পাথর ছুড়িলে তাহাদের দিকে রেলপুলিশ শূন্যে বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করিলে এই বার্তা যাইবে যে, পাথর ছুড়িলে গুলি খাইতে হইতে পারে। সুতরাং প্রাণের ভয়ে তাহারা নিরস্ত হইতে পারে এমন দুষ্কর্ম হইতে।

সুত্র:ইত্তেফাক, , ১০ মে, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.