শিরোনাম

হাইস্পিড ট্রেনে ৫৭ মিনিটেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

হাইস্পিড ট্রেনে ৫৭ মিনিটেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

ইসমাইল আলী: বর্তমানে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। এতে ৩২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালুর জন্য প্রস্তাবিত রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে সর্বোচ্চ ২৩৩ কিলোমিটার। এতে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা হয়ে সরাসরি চট্টগ্রাম যাবে ট্রেন। আর হাইস্পিড ট্রেনের গতি হবে সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার। এতে মাত্র ৫৭ মিনিটেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। যদিও বর্তমানে এ রুটে সাধারণ ট্রেনে যাতায়াতে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এতে দেখা যায়, আগামী বছর নির্মাণ শুরু করলে ২০২৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালু করা যাবে। যাত্রী চাহিদা মেটাতে সে বছর ৪৫ জোড়া ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে হবে ২০৩০ সালে ৫০ জোড়া, ২০৩৫ সালে ৬০ জোড়া, ২০৪০ সালে ৯৮ জোড়া ও ২০৪৫ সালে ১৪৪ জোড়া।
প্রতিবেদনে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথের জন্য চারটি সম্ভাব্য রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর প্রথমটি হলো ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় রুটটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তৃতীয় রুটটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম ও চতুর্থটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, লাকসাম, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জমির কম ব্যবহার ও গতি নিশ্চিতে এ চারটি রুট উড়ালপথে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনও রুট চূড়ান্ত না হলেও হাইস্পিড রেলপথের জন্য প্রথম দুটিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে রেলওয়ে। কারণ কুমিল্লায় স্টেশন না থাকায় তৃতীয় ও চতুর্থ রুটে যাত্রী কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে রুট চূড়ান্তের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামত নেবে রেলওয়ে।
প্রতিবেদনে চারটি রুটের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে প্রথম রুটের দৈর্ঘ্য হবে ২২৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার, দ্বিতীয় রুটের ২৩২ দশমিক ৯, তৃতীয় রুটের ২২২ দশমিক ৮ ও চতুর্থ রুটের ২২০ দশমিক ৪ কিলোমিটার। প্রথম রুটে সবচেয়ে বেশি জমি প্রয়োজন হবে। আর সবচেয়ে কম জমি লাগবে চতুর্থ রুটে।

এদিকে চারটি রুটের মধ্যে প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ রুটে ছয়টি করে স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। আর দ্বিতীয় রুটের ক্ষেত্রে স্টেশন হবে সাতটি। যদিও এক্ষেত্রে কুমিল্লা থেকে লাকসাম অংশটিতে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। তবে ১০টি সূচকের ভিত্তিতে প্রথম রুটটি তথা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম করিডোরে হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের জন্য সুপারিশ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে চলমান ও সম্প্রতি নির্মিত হাইস্পিড রেলপথের তুলনা দেখানো হয় প্রতিবেদনে। এক্ষেত্রে ঘণ্টায় ২৫০ ও ৩০০ কিলোমিটার গতির রেলপথ নির্মাণ ব্যয় ও কারিগরি দিকের তুলনা দেখানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যয় তুলনামূলক খুব বেশি না হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের জন্য ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার গতির রেলপথ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
যদিও ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের চূড়ান্ত ব্যয় প্রাক্কলন করতে পারেনি পরামর্শকরা। রুট চূড়ান্ত হওয়ার পর বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের সময় এ ব্যয় চূড়ান্ত করা হবে।

চারটি রুটের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিরতিহীনভাবে যেতে সময় লাগবে যথাক্রমে ৫৬, ৫৭, ৫৫ ও ৫৪ মিনিট। আর প্রতি স্টেশনে দুই মিনিট করে বিরতি দিলে প্রস্তাবিত চার রুটে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডারে যাতায়াতে সময় লাগবে যথাক্রমে ৭০, ৭৬, ৬৯ ও ৬৮ মিনিট।
হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের পর বিদ্যমান ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনটি কমিউটার ও লোকাল ট্রেন এবং পণ্যবাহী বিভিন্ন ট্রেন পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা যাবে।

হাইস্পিড ট্রেনে ভাড়া কত হবে:
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অংশ হিসেবে তিন হাজার ৮৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ছিল এক হাজার ৬৭৯ জন ট্রেনের যাত্রী, এক হাজার ১৩ জন বাস যাত্রী, ৫৪২ জন বিমান যাত্রী ও ৩৩৭ জন মোটরগাড়ি যাত্রী। তাদের ৯৮ শতাংশ হাইস্পিড ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেনে ভাড়া কত হওয়া উচিতÑএ বিষয়েও যাত্রীদের মতামত নেওয়া হয়। এতে ৭৯ শতাংশ যাত্রী জানায়, রেলের বিদ্যমান ভাড়ার দেড়গুণ হওয়া উচিত হাইস্পিড ট্রেনের ভাড়া। তবে ৭২ শতাংশ যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা হারে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেনে দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে প্রস্তুত। আর ৬৯ শতাংশ মনে করে, বিমান ভাড়ার অর্ধেক হওয়া উচিত হাইস্পিড ট্রেনের ভাড়া।

যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা কত হবে:
২০১৭ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দৈনিক গড়ে এক লাখ ৬২ হাজার ৩৯৬ জন যাতায়াত করেন। এর মধ্যে সড়কপথেই (বাসে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে) যাতায়াত করেন দৈনিক গড়ে এক লাখ ১৩ হাজার ৭৯৬ জন। আর ট্রেনে দৈনিক গড়ে ৩৬ হাজার ৬১৬ ও বিমানে সাত হাজার ৪৩৯ জন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ২০৩০ সালে যাতায়াত করবে দুই লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৭ জন ও ২০৪৫ সালে ছয় লাখ ২৮ হাজার ৮১ জন। ওই সময়ও এ রুটে সড়কপথেই নির্ভরতা থাকবে বেশি। এর মধ্যে ২০৩০ সালে সড়কপথে দুই লাখ সাত হাজার ২২১ ও ২০৪৫ সালে চার লাখ ৪৩ হাজার ৬৪৫ জন। ওই সময় রেলপথে যাতায়াত করবে যথাক্রমে ৭৯ হাজার ৬৫৬ ও এক লাখ ৩৩ হাজার ২৭৩ জন।
তবে হাইস্পিড ট্রেন চালু হলে রেলপথে যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। ২০৩০ সালে ৫০ জোড়া ট্রেনে দৈনিক এক লাখ ২৮ হাজার ৩১৪ জন যাত্রী পরিবহন করা যাবে। আর ২০৪৫ সালে ১৪৪ জোড়া হাইস্পিড ট্রেনে দৈনিক গড়ে তিন লাখ ২৮ হাজার ৪৫৫ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এতে সড়কপথের ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এক্ষেত্রে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে এ রুটে।

যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও পণ্যবাহী হাইস্পিড ট্রেন এ রুটে চালানো যাবে। এক্ষেত্রে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চালানো হবে এ করিডোরে। এতে ২০৩০ সালে দৈনিক ১০ জোড়া ও ২০৪৫ সালে দৈনিক ২০ জোড়া ট্রেন চালানো যাবে। আর রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত রেলপথটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত চেকিংয়ের কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ যৌথভাবে পরিচালনা করছে চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন ও বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ। এতে ব্যয় হচ্ছে ১১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। গত বছর ৩১ মে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই করা হয়। দেড় বছরের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দুটি।

সুত্র:শেয়ার বিজ, জানুয়ারি ২০, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.