মফিজ জোয়ার্দ্দার: চুয়াডাঙ্গা জেলার ১০টি রেলস্টেশনে কোনো যাত্রী পরিষেবাই নেই। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার কেন্দ্রস্থল হলেও টিকিট চাহিদা মিটছে না যাত্রীদের। এতে দারুণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ট্রেনযাত্রা চুয়াডাঙ্গা থেকে শুরু করলেও যাত্রীরা বেশি দামে টিকিট কিনছেন পার্শ্ববর্তী যশোর ও খুলনা থেকে। এতে তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে ১০টি স্টেশন। এগুলো হলো আনসারবাড়িয়া, উথলী, দর্শনা হল্ট, আন্তর্জাতিক স্টেশন দর্শনা, জয়রামপুর, গাইদঘাট, চুয়াডাঙ্গা, মোমিনপুর, মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা। এর মধ্যে আনসারবাড়িয়া, জয়রামপুর, গাইদঘাট, মোমিনপুর ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের সরকারি কার্যক্রম জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে কিন্তু বেসরকারি ট্রেনগুলো এসব স্টেশনে থেকে যাত্রী ওঠানামা করায় এবং টিকিট বিক্রি করে।
মোমিনপুর রেলস্টেশন সরকারিভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও সেখান থেকে বেসরকারিভাবে মেইল ও লোকাল ট্রেনের চলাচল করছে। অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। সেটা দখলদারদের দখলে রয়েছে। এক অংশ দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে রাজনৈতিক কার্যালয়।
সরকারিভাবে বন্ধ মুন্সীগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে প্রত্যেক দিনই বেসরকারিভাবে চলাচল করা ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। টিকিট বিক্রির ছোট একটি বন্ধ ঘরে সিগনালের কার্যক্রম পালাক্রমে পরিচালনা করছেন গেটম্যান আবদুল গনি ও বিল্লাল হোসেন। আবদুল গনি জানান, খুব সমস্যার মধ্যেই এ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই।
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী জাহিদ ও আবদুল লতিফ জানান, আনসারবাড়িয়া রেলস্টেশনের সব কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ স্টেশনের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। বসার স্থান নেই। প্রভাবশালীরা গোটা স্টেশন তাদের ব্যবসার জন্য দখল করে নিয়েছে। বেশি দিন বন্ধ থাকলে আরও অকেজো হয়ে যাবে এ স্টেশনটি। এ স্টেশনে শুধু লোকাল ও মেইল ট্রেন থামে।
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের সংবাদকর্মী সালাউদ্দীন কাজল জানান, উথলী রেলস্টেশনে যাত্রীদের বসবার জায়গা থাকলেও সেখানে কোনো শৌচাগার নেই। এ কারণে যাত্রীদের দারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার ব্যবসায়ী হারুন অর রশীদ ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু জানান, দর্শনা হল্টস্টেশন প্ল্যাটফর্ম বাড়িয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় যাত্রীরা যে কোনো সময় খাদে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এছাড়া স্টেশনের অনেক অংশজুড়ে কোনো সেড নেই। সেজন্য যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ স্টেশনে প্রতিদিন কয়েকশ’ যাত্রীর জন্য একটি শৌচাগার আছে। এখানকার যাত্রী বিশ্রামাগারটি জিআরপি পুলিশের দখলে থাকায় যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারেন না।
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মিজানুর রহমান জানান, এ স্টেশন থেকে চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার যাত্রীরা যাতায়াত করেন। স্টেশনে প্রতিদিন দেড় হাজারের মতো যাত্রী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। এখানে প্রথম শ্রেণি ও সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার রয়েছে। কিন্তু প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগার খোলা হয় না। গোটা স্টেশনে দুটি শৌচাগার রয়েছে। যাত্রী সুবিধার জন্য প্ল্যাটফর্ম দুই ধারে বাড়ানো হলেও সেখানে সেড ও বসার জায়গা না থাকায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে ও বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।
তিনি জানান, আন্তঃনগর ট্রেনে তিন জেলার যাত্রীর চাপ থাকলেও এখান থেকে টিকিট পাওয়া যায় না। কমপক্ষে ৬০টি তাপানুকুল ও কেবিনের টিকিট দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে কিছুটা ঝামেলামুক্ত থাকা যায়। যাতায়াতের জন্য এ টিকিটগুলো বেশি দামে যশোর ও খুলনা থেকে সংগ্রহ করে যাত্রীরা।
পাবনা জেলার পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, এ বিভাগের আওতায় ১০টি জেলা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে ১০টি স্টেশন। এর মধ্যে আনসারবাড়িয়া, জয়রামপুর, গাইদঘাট, মোমিনপুর ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের সরকারি কার্যক্রম জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে কিন্তু বেসরকারি ট্রেনগুলো এসব স্টেশনে থেকে যাত্রী ওঠানামা করায় এবং টিকিট বিক্রি করে। তবে জনবল সংকট নিরসনে সরকারিভাবে প্রত্যেকটি রেলস্টেশনের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে দ্রুতই চালু করা হবে। টিকিট সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা ওপরের ব্যাপার, সে কারণে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।
সুত্র:শেয়ার বিজ, অক্টোবর ১০, ২০১৯