শিরোনাম

রেলওয়ে কুলিদের ঈদ কাটে স্টেশনে, নেই কোন সহযোগিতার উদ্যোগ


।। নিউজ ডেস্ক ।।
রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে ঘরমুখো হাজারো মানুষের ভিড়। এর মধ্যে প্রধান ফটক থেকে ট্রলিতে যাত্রীদের ব্যাগ, লাগেজ নিয়ে প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছেন সেলিম মিয়া নামে এক কুলি। নির্দিষ্ট ট্রেনের সামনে গিয়ে তা নামিয়ে দেন। যাত্রীর অনুরোধে ব্যাগ, লাগেজ উঠিয়ে দেন কোচেও। বিনিময়ে ৪০ টাকা মজুরি পান তিনি। পরে যাত্রীকে সালাম দিয়ে চলে যান হাসিমুখে।

সেলিমের মতো এমন দুই শতাধিক নিবন্ধিত কুলি কমলাপুর রেলস্টেশনে কাজ করেন। কিন্তু ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় তাদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী এবং নতুন জামা-কাপড় বিতরণের কোনো উদ্যোগ নেই বাংলাদেশ রেলওয়ের। অথচ ঢাকার সবাই যখন ঈদ করতে গ্রামে যান, তখনও তারা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন।

কুলিরা জানান, গত দুই বছর করোনাকালীন একটা দীর্ঘ সময় রেলস্টেশনে কাজ বন্ধ ছিল। তখনও কুলিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি রেলওয়ে। তখন অনেক কুলি ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যান। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় তারা আবার ঢাকা ফিরেছেন। তবে ঈদের সময় পরিবারের বাড়তি খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানিয়েছেন তারা। ফলে অতিরিক্ত অর্থের জোগান দিতে ঈদের দিনও কাজ করেন তারা। রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই কাটে এসব কুলির ঈদ।

তবে বরাবরের মতোই কিছু কুলির বিরুদ্ধে ব্যাগ, লাগেজ, মালামাল নিয়ে টানাটানি এবং সামান্য দূরত্বে পৌঁছে দিয়েই অতিরিক্ত টাকা দাবির অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হয়। তবে কুলিদের দাবি, আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে কুলিদের দৌরাত্ম্য ছিল। এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। যাত্রীরা খুশি হয়ে যা দেন তা-ই নেন কুলিরা। এ নিয়ে কুলি-যাত্রী বাগবিতণ্ডার সুযোগ নেই। বাগবিতণ্ডা করলে কোনো যাত্রী যদি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন তাহলে ওই কুলির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

কুলি ফিরোজ আলম পরিবার নিয়ে থাকেন মুগদার একটি ছোট্ট ভাড়া ঘরে। প্রতিদিন রেলস্টেশনে কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোমতে চলে তার সংসার। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতরে দুই ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীকে নতুন জামা কিনে দিতে হবে। সেমাই-ফিরনি রান্না করতে হবে, এ খরচ নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি।

আলাপকালে ফিরোজ বলেন, ঈদ উপলক্ষে ছেলে-মেয়ে নতুন জামার বায়না ধরেছে। নিজে না খেয়ে হলেও তাদের নতুন জামা কিনে দিতে হবে। বউকে এক বছর আগে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম। এরপর আর কিছু দিতে পারিনি। এখনতো কিছু দিতে হবে। কিন্তু এ খরচ কীভাবে সামাল দেবো- তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কমলাপুর রেলস্টেশনে কুলির কাজ করে দিনে চার থেকে পাঁচশ টাকা আয় হয়। সংসার খরচেই তা চলে যায়। স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়ের খাতা-কলমও ঠিকমতো কিনে দিতে পারি না। এখন ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ে যদি কোনো সহযোগিতা করতো, চিন্তামুক্তভাবে কাজ করতে পারতাম।

প্রায় এক যুগ ধরে কমলাপুর রেলস্টেশনে কুলির কাজ করেন রংপুরের জামাল উদ্দিন। এই ১২ বছরের মধ্যে একবারও তিনি গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি। এবার ঈদেও তার বাড়ি যাওয়া হবে না।

জামাল উদ্দিন বলেন, সাধারণত ঈদের ছুটিতে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকে। কাজও বেশি পাই। টাকাও কিছুটা বেশি আয় হয়। অন্য সময় দিনে যা আয় হয়, ঢাকায় মেসে থাকা-খাওয়ার খরচে তার অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট। সরকার যদি ঈদকেন্দ্রিক কিছু সহযোগিতা করতো তাহলে উপকৃত হতাম।

২০১৯ সালের এপ্রিলে কমলাপুর রেলস্টেশনে কুলি চার্জ তালিকা টাঙিয়েছে রেলওয়ে। যাত্রীদের সুবিধার্থে স্টেশনে লাগেজ বহনকারী কুলিদের আইডি কার্ড, পোশাকের মাধ্যমে কুলি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নসহ মালামাল বহনে ট্রলি, প্রতিবন্ধী-অসুস্থ, বয়স্ক রোগীদের জন্য হুইলচেয়ার সরবরাহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চার্জ সংশ্লিষ্ট তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- ২৮ কেজির একটি ব্যাগ ১৫ টাকা, দুটি ব্যাগ ২০ টাকা, ৩৭ কেজির দুটি ব্যাগ ২৫ টাকা, ৫৬ কেজি পর্যন্ত ব্যাগ ৩৫ টাকা। ট্রলি যাত্রী ব্যবহারে ১৫ টাকা, কুলি ব্যবহারে ২০ টাকা, হুইলচেয়ার কুলি ব্যবহারে ২০ টাকা। এমন চার্জে যেতে রাজি না হলে কুলিদের আইডি নম্বরসহ স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।

এমন পদক্ষেপে সাধারণ যাত্রীরা খুশি হলেও সন্তুষ্ট নন স্টেশনের কুলিরা। স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কুলি কামরুল বলেন, কমলাপুর স্টেশনে ২৭৩ জন নিবন্ধিত কুলি রয়েছেন। এখানের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে আমাদের সংসার চলে। রেলওয়ে যে চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে, এটা একেবারেই কম। এত কম হলে সংসার কীভাবে চালাবো?

এসময় পাশে থাকা কুলি রেজাউল বলেন, বছরে দুই ঈদ এবং আম, কাঁঠালের সময় কাজ বেশি পাই। অন্য সময় তেমন কাজ পাই না। রেলওয়েকে কুলিদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখা উচিত।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জাগো নিউজকে বলেন, কুলিরা রেলওয়ের স্থায়ী বা অস্থায়ী কর্মচারী নন। তাই রেলওয়ে থেকে সরাসরি তাদের সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি মানবিক। অন্তত বছরে দুই ঈদে তাদের কিছু নগদ অর্থ বা খাদ্যসামগ্রী দিলে ঈদটা ভালো কাটতো। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

সূত্রঃ জাগোনিউজ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.