শিরোনাম

এক যুগেও বাড়েনি রেলপথে কনটেইনার পরিবহন

এক যুগেও বাড়েনি রেলপথে কনটেইনার পরিবহন

সুজিত সাহা : ১৯৮৭ সালে ঢাকার কমলাপুরে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) স্থাপনের পর রেলপথে কনটেইনার পরিবহনে গতি আসে। আমদানিকৃত পণ্যবাহী কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে নিয়ে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার সুযোগ থাকায় ব্যবসায়ীরাও এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে রেলপথে কনটেইনার পরিবহনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু সময়ক্ষেপণ, ওয়াগন ও ইঞ্জিন সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীদের এ আগ্রহ ধরে রাখা যায়নি। ফলে এক যুগ ধরে রেলপথে কনটেইনার পরিবহনের হার বাড়েনি, উল্টো কমেছে।

রেলের বার্ষিক পরিবহন ও আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৭৬ হাজার ২৪৩টি ওয়াগন পরিবহন করে রেলওয়ে। এতে সংস্থাটির আয় হয় ৫২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর এক দশক পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৩ হাজার ২১১টি ওয়াগন পরিবহন করে রেলওয়ে। এ থেকে আয় হয় ৮১ কোটি ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১১ বছরের ব্যবধানে কনটেইনার পরিবহন না বেড়ে বরং কমেছে ৩ হাজার ৩২টি। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৪৬৫ ওয়াগন পরিবহন করে রেলওয়ে আয় করেছে ৬৫ কোটি ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৯ টাকা। অর্থবছরের শেষেও কনটেইনার খাতের ওয়াগন পরিবহন ও আয়ে ১১ বছর আগের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি রেলওয়ে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কনটেইনার কোম্পানি লিমিটেডের বোর্ড চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জেল হোসেন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, রেলপথে কনটেইনার পরিবহন কমেছে এটা মিথ্যে নয়। কনটেইনারসহ রেলপথে পণ্য পরিবহন বাড়াতে সরকার ২০১৫ সালে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠন করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রায় এক হাজার ওয়াগন আমদানির একটি প্রকল্পও একনেকে পাস হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রেলপথে পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে।

সড়কপথের চেয়ে প্রায় অর্ধেক খরচে পণ্য পরিবহন করা হয় রেলপথে। রেলপথে পণ্য বা কনটেইনার পরিবহনে ঝুঁকিও কম। তা সত্ত্বেও রেলপথের চেয়ে সড়কপথের দিকেই বেশি আগ্রহ ব্যবসায়ীদের। দেশের অভ্যন্তরীণ সড়কপথগুলো সংস্কার ও ডবল লেনে রূপান্তরের কারণে রেলের চেয়ে দ্রুত পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সড়কপথকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ পণ্য রেলপথে পরিবহন হয়। বাকি পণ্য পরিবহন হয় সড়কপথে। পর্যাপ্ত ওয়াগন না থাকা, ইঞ্জিনের স্বল্পতা ছাড়াও পণ্য পরিবহনে ধীরগতির কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রেলপথ বিমুখ হতে হচ্ছে তাদের।

রেলওয়ের কনটেইনার পরিবহনের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১২ বছরের মধ্যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮১ হাজার ৯৭১ ওয়াগন কনটেইনার পরিবহন করেছে রেলওয়ে। এরপর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭৩ হাজার ৪৯৩, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬৫ হাজার ৮৪৯, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬৫ হাজার ৬১৭, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৫৯, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ২৩৬, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬০ হাজার ৩১৫, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৩৪৩ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৯০৩টি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে রেলপথে। যদিও প্রতি বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের কনটেইনার প্রবৃদ্ধি প্রায় ১২ শতাংশ। বিপুল পরিমাণ আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ফলে আয়ের সুযোগ থাকলেও অবকাঠামোগত দুর্বলতায় তা কাজে লাগাতে পারছে না রেলওয়ে।

দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের বোর্ড সদস্য মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, কনটেইনার পরিবহনে আলাদা একটি কোম্পানি গঠন হলেও এর কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কোম্পানিটি কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে পারলে সড়কের ওপর ভারী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা কম খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারতেন। আমরা চেম্বারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে কনটেইনার কোম্পানিটির কর্মকাণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। পণ্য পরিবহন খাতের একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলওয়ে কনটেইনার কোম্পানিকে সহযোগিতা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১ জুলাই রেলের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) ১০ বছরের চুক্তি সই হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকা আইসিডি পরিচালনা করবে চবক। এক্ষেত্রে লিফট অন/অফ, এক্সট্রা মুভমেন্ট, হোয়েস্টিং চার্জ ও এলসিএল খাতে প্রাপ্য আয়ের ৭৫ শতাংশ পাবে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ২৫ শতাংশ পাবে রেলওয়ে।

স্টোর রেন্ট ও গুদাম ভাড়ার ৭০ শতাংশ এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিক্রীত পণ্যের বিপরীতে আয়ের ৩৫ শতাংশ রেলওয়ে পাবে। এছাড়া আইসিডির ওয়েব্রিজ চার্জের ৭৫ শতাংশ রেলওয়ের পাওনার শর্ত রেখে চুক্তিটি নবায়ন হয়। রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে কনটেইনার ডিপো স্থাপন হলেও পরিচালনায় রেলওয়ের ব্যর্থতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে এর দায়িত্ব দেয়া হয়। ফলে বিশেষায়িত একটি খাত হিসেবে কনটেইনার পরিবহনে রেলওয়ে বারবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

সুত্র:বণিক বার্তা, আগস্ট ২৬, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.