শিরোনাম

চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও নাজিরহাট রুট : ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়েও বাড়ছে না ট্রেনের গতি

চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও নাজিরহাট রুট : ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়েও বাড়ছে না ট্রেনের গতি

সুজিত সাহা:
চট্টগ্রামে রেলওয়ের পুরনো দুটি রুট চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও চট্টগ্রাম-নাজিরহাট। রেললাইন দুটি সংস্কারে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু তার পরও রেলপথ দুটিতে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ৪৫ কিলোমিটারেই রয়ে গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের কাজের কারণে ওই দুই রুটে ট্রেনের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো যাচ্ছে না। দেয়া যাচ্ছে না উন্নত মানের রেলসেবা।

মিটার গেজ রেলপথে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ৭৫ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের প্রধান রেলপথগুলোর বিভিন্ন সেকশনে এ গতিতেই ট্রেন চলাচল করে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, সংস্কারকাজের জন্য গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ থাকা সেকশনে গতিবেগ কমানো হয়। তবে যেসব পুরনো সেকশনের সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে গতিবেগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা হয়। মূলত প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ে (জিআইবিআর) সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করে গতিবেগ বৃদ্ধির অনুমোদন দেন। জিআইবিআরের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকৌশল দপ্তর গতি বাড়াতে নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা পেলে পরিবহন বিভাগ সে অনুযায়ী কন্ট্রোল অর্ডার দেয় বা টাইম টেবিল বইতে গতিবেগ নতুন করে যোগ করে। কিন্তু প্রকৌশল দপ্তরকে একাধিকবার অনুরোধ জানানোর পরও চট্টগ্রাম-দোহাজারী এবং চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে ট্রেনের গতিবেগ প্রায় আগের অবস্থাতেই রয়েছে।

রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের পুরনো দোহাজারী ও নাজিরহাট রেলপথে ট্রেনের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। সংস্কার প্রকল্পের পর রেলপথ দুটিতে গতি বাড়িয়ে সর্বোচ্চ গতিবেগ রাখা হয়েছে ৪৫ কিলোমিটার (ষোলশহর-ফতেয়াবাদ সেকশন পর্যন্ত)। এছাড়া কাঞ্চননগর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত গতিবেগ ২০ কিলোমিটার, ষোলশহর থেকে কাঞ্চননগর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হাটহাজারী থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রাখা হয়েছে। যদিও বড় ধরনের সংস্কারকাজের পর রেলের গতিবেগ সর্বনিম্ন ৬৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকার কথা।

দোহাজারী ও নাজিরহাট পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনাকারী একাধিক লোকোমাস্টার বলেন, সংস্কারকাজ শেষ হলেও এ দুটি রেলপথে পর্যাপ্ত পাথর বসানো হয়নি। ফলে লোকোমাস্টাররা চাইলেও গতিবেগ বাড়াতে পারছেন না। রেলপথ সংস্কারে মূলত রেলপথের নিচে ভালো মানের মাটির ব্যবহার করা প্রয়োজন হলেও সংস্কার প্রকল্পের অধিকাংশ স্থানেই কাজ ত্রুটিপূর্ণ। এর ফলে বড় ইঞ্জিনের পরিবর্তে ছোট ওজনের ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে রেলওয়েকে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় জনগণের স্বার্থে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া না গেলে অর্থ ব্যয়ের কোনো মানে হয় না। চট্টগ্রাম-দোহাজারী ও চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে ট্রেনের গতিবেগ না বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে সমস্যাগুলো সমাধানে রেলওয়ে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

ষোলশহর থেকে দোহাজারী ও নাজিরহাট পর্যন্ত রেলপথ সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে।

২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ২০৩ দশমিক ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পের অধীন চট্টগ্রাম-দোহাজারী ৪৫ কিলোমিটার রুটে ১৬টি স্টেশন, প্লাটফর্ম নির্মাণ এবং ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট ২২ কিলোমিটার রুটে চারটি স্টেশন, প্লাটফর্ম ও রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৫ দশমিক ৪০ কিলোমিটার এবং ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট পর্যন্ত ২২ দশমিক ২০ কিলোমিটার রেলপথ পুনঃস্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ধীরগতির কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২৩১ কোটি ৩৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রথম দফার বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়িয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় ।

সুত্র:বণিক বার্তা, মে ০১, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.