সৌমিত্র শীল চন্দন: লোকবলের তীব্র সংকট বিরাজ করছে রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনে। স্টেশন মাস্টার, টিটিইসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অর্ধেক লোকবলও নেই। এতে একদিকে যেমন রেলের সেবা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথের বেশিরভাগ স্টেশনে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এ রেলপথের ২৯ স্টেশনের মধ্যে মাস্টার নেই ২১টিতে, আর টিকিট বিক্রি হয় না ১৫টি স্টেশনে। রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনে টিটিই রয়েছেন মাত্র চারজন। ফলে যাত্রীরা স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ট্রেনে না ওঠায় এবং ট্রেনে পর্যাপ্ত সংখ্যক টিটিই না থাকায় বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রুটে রাজবাড়ী এক্সপ্রেস নামে একটি মেইল ট্রেন দিনে চারবার এবং রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে একই ট্রেন নাম পাল্টে ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস নামে দিনে দু’বার চলাচল করে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথে রয়েছে ১৭টি স্টেশন। এগুলোর মধ্যে রাজবাড়ী, কালুখালী, মধুখালী, কাশিয়ানী ও ভাটিয়াড়া- এ পাঁচটি স্টেশনে স্টেশন মাস্টার রয়েছেন। বাকি ১২টি স্টেশনে মাস্টার নেই। আর টিকিট বিক্রি হয় না নয়টি স্টেশনে।
রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেলপথে রয়েছে ১৩টি স্টেশন। এর মধ্যে অম্বিকাপুর ও ফরিদপুর কলেজ স্টেশনে ট্রেন থামে না। স্টেশন মাস্টার রয়েছেন চারটি স্টেশনে। টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই ছয় স্টেশনে। রাজবাড়ী-পোড়াদহ রেলপথে রয়েছে ১২টি স্টেশন। এ রুটে চলাচল করে তিনটি ট্রেন। এ রুটের বেশ কয়েকটি স্টেশনে মাস্টার নেই বলে জানা গেছে।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে চারজন মাস্টার থাকার কথা, রয়েছেন দু’জন। স্টেশনগুলোতে মাস্টার থাকলে ট্রেন ক্রসিং দিতে সুবিধা হতো। রাজবাড়ী থেকে কালুখালী ট্রেন যেতে লাগে ৩৫ মিনিট। কোনো ট্রেন ক্রসিং দিতে হলে ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। ট্রেনটি যদি বেলগাছিতে ক্রসিং দেওয়া যেত তাহলে সময় অনেক বেঁচে যেত। লোকবলের সংকটের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
রাজবাড়ী রেলওয়ের জুনিয়র ইন্সপেক্টর টিটিইজ (জিআরআই) মোকলেসুর রহমান সাগর জানান, রাজবাড়ী সেকশনে ছয়জন টিটিইর পদ রয়েছে। সেখানে টিটিই আছেন চারজন। এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনে বগি থাকে ছয়টি। দু’জনের পক্ষে ছয়টি বগি কভার করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তার ওপর বেশিরভাগ স্টেশনে বিক্রি হয় না টিকিট। ট্রেনের ভেতরে টিকিট না করা যাত্রীদের একসেস ফেয়ার টিকিট (ইএফটি) দিতে হচ্ছে। একটা ইএফটি টিকিট লিখতে বেশ সময় ব্যয় হয়। যে কারণে চার-পাঁচজন যাত্রী মিলে একটি টিকিট করা হয়। প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার টাকার ইএফটি টিকিট বিক্রি করা হয়। টিটিই সংখ্যা বাড়ানো হলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়ত। টিটিই সংকট দূর করার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালিউল হক বলেন, লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট থেকে যারা অবসরে গেছেন বা যাচ্ছেন তাদের ফেরত এনে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাসুদ সারোয়ার বলেন, রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়া ও রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা রুটের স্টেশনগুলোতে লোকবল সংকট দূর করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেখানে টিকিট বিক্রি খুবই জরুরি সেখানে যে কোনো উপায়ে আমরা টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। সরকার লোকবল সংকট দূর করার ব্যাপারে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। রেলমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, খুব দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা অগ্রসরও হচ্ছিলাম। সম্প্রতি আমাদের রেলের নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুসারে যে নিয়োগ দেওয়া হতো হাইকোর্ট এক আদেশে তা স্থগিত করেছেন। এ কারণে রেল মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারছে না। এর সমাধান হয়ে গেলেই আমাদের যে সার্কুলার দেওয়া আছে তার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও টিকিট না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে কর্তব্যরত টিটিইর সংখ্যা কম থাকায় এবং যাত্রী বেশি হওয়ায় ইএফটি টিকিট চারজনের জন্য একটি কাটার কথা বলা আছে। জনে জনে টিকিট করতে সময় বেশি লাগায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে টিকিটের টাকা নিয়ে টিকিট এন্ট্রি না করলে জানামাত্রই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্র:সমকাল, ০৩ মার্চ ২০২০