সুজিত সাহা :
দীর্ঘদিন ধরে কর্মী সংকটে আছে রেলওয়ে। ফলে বেশকিছু রেলস্টেশন সার্বক্ষণিক চালু রাখা নিয়ে সমস্যায় আছে সংস্থাটি। এ অবস্থায় স্টেশন মাস্টারদের ওভারটাইম দিয়েই সাময়িক বন্ধ থাকা ৩৩টি স্টেশন চালু রেখেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঢাকা বিভাগে মোট স্টেশনের সংখ্যা ১৪৩। এর মধ্যে ‘বি’ শ্রেণীর ১০৭টি, ‘ডি’ শ্রেণীর ৩০টি এবং হল্ট (ট্রেন থামবে কিন্তু কোনো স্টেশন মাস্টার রাখার বিধান নেই) স্টেশনের সংখ্যা ছয়টি। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে ‘বি’ শ্রেণীর ৬০টি, ‘ডি’ ২০টি ও হল্ট স্টেশনের সংখ্যা পাঁচটি। এসব স্টেশনে মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে ১৪৩ জন স্টেশন মাস্টারের পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় এ দুই বিভাগের সাময়িক বন্ধ (দৈনিক এক শিফট বন্ধ) ৩৩টি স্টেশন সার্বক্ষণিক চালু আছে মাস্টারদের ওভারটাইমেই। এজন্য এসব স্টেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী স্টেশন মাস্টারদের সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টার ওভারটাইম ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্টেশন মাস্টারদের ওভারটাইমে চালু থাকা স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে— পূর্বাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের মুকুন্দপুর, শাহজিবাজার, রশিদপুর, সাতগাঁও, ভানুগাছ, শমসেরনগর, নোয়াপাড়া, লংলা, বরমচাল, ভাওয়াল গাজীপুর, সাতখামাইর, কাওরাইদ, মশাখালী, ধলা, আউলিয়ানগর, বিদ্যাগঞ্জ, আঠারবাড়ী, নুরুন্দি, কেন্দুয়াবাজার, সরিষাবাড়ী, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল রোড, গচিহাটা, মানিকখালী, সরারচর, কুলিয়ারচর, উমেননগর, মোগলাবাজার, হরষপুর ও মনতলা। এছাড়া চট্টগ্রামে সাময়িক বন্ধ স্টেশন তিনটি হলো— ইমামবাড়ী, মন্দবাগ ও রাজাপুর।
রেলওয়ের নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রেলের বিভিন্ন স্টেশনের লোকবল সংকটের কারণে এর আগেও কিছু কিছু স্টেশন মাস্টার প্রয়োজনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের শেষ দিকে পূর্বাঞ্চলের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ের এডিজি (অর্থ) দপ্তরের সম্মতি নিয়ে প্রতিটি স্টেশনের দুজন করে স্টেশন মাস্টারের দৈনিক ৪ ঘণ্টা করে ওভারটাইম প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ৫ ডিসেম্বর রেলওয়ের উপপরিচালক/ই-৩ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত স্টেশনগুলো ওভারটাইমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক চালু রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বণিক বার্তাকে বলেন, রেলওয়েতে কর্মরত স্টেশন মাস্টারদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বন্ধ ও সাময়িক বন্ধ স্টেশনগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রেলের স্টেশনগুলোয় সার্বক্ষণিক কর্মকাণ্ড চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রেলের কর্মী সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ায় স্টেশন মাস্টার সংকট কিছুটা বেড়েছে। রেলওয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৫৮ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগ দেয়া হয়। সেখান থেকে পূর্বাঞ্চলে পদায়ন করা হয় ১০১ জন সহকারী স্টেশন মাস্টারকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বন্ধ স্টেশনের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সহকারী স্টেশন মাস্টার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে দেয়া হয়েছে ৫১ জন এবং ঢাকা বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৫০ জনকে। এতে বেশকিছু বন্ধ স্টেশনও চালু সম্ভব হয়। পরবর্তীতে কর্মীদের অবসরোত্তর ছুটির কারণে আবার স্টেশন মাস্টার সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।
সুত্র:বণিক বার্তা,জানুয়ারি ৩১, ২০১৮