শিরোনাম

অর্ধেক ডেমুই অচল

অর্ধেক ডেমুই অচল

যানজট নিরসনে ২০১৩ সালে চীন থেকে ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন আমদানি করে রেলওয়ে। কিন্তু মাত্র সাড়ে চার বছরেই আমদানিকৃত এসব ডেমুর অর্ধেকই অচল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি অকেজো ছয় সেট ডেমু।

গত রোববার ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচলরত ডেমু ট্রেনটি পথিমধ্যেই বিকল হয়ে যায়। এর দুদিনের মাথায় সোমবার বিকল হয়ে পড়ে ঢাকা-জয়দেবপুর রুটের ডেমু ট্রেনটি। আর সর্বশেষ গতকাল দুপুরে নষ্ট হয়ে গেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ডেমু সেটটি।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেয়া তথ্যানুসারে, ২০১৬ সালের এপ্রিলেই পূর্বাঞ্চল রেলে চলাচলরত তিন সেট (৩, ১০ ও ১৯ নম্বর) ডেমু নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি সেট ডেমুর উভয় পাশেই ইঞ্জিন থাকায় ট্রেনগুলো আধুনিক ওয়ার্কশপে নিয়ে মেরামত করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়েতে সে ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় ওই তিন সেট ডেমু মেরামতহীনভাবেই পড়ে আছে ওয়ার্কশপে। অন্যদিকে চলতি বছরের শুরুতে নষ্ট হয়ে যায় পূর্বাঞ্চল রেলের ২ ও ৮ নম্বর ডেমু সেট, যা এখন মেরামতের অযোগ্য। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলরত দুই সেট ডেমুর মধ্যে এক সেট প্রায় এক বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে মাত্র এক সেট ডেমু দিয়ে পার্বতীপুর থেকে লালমনিরহাট ও পার্বতীপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে অনিয়মিত সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে। এছাড়া পূর্বাঞ্চলে থাকা ৪, ৭, ১১ ও ১৯ নম্বর ডেমু সেটগুলোও প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়ে।

নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়ায় ডেমু ট্রেনের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত খোদ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. শামসুজ্জামান ডেমু ট্রেন নিয়ে জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে বণিক বার্তাকে বলেন, ডেমু ট্রেনগুলো মেরামতে বিশেষায়িত ওয়ার্কশপের প্রয়োজন। তবে ডেমু মেরামতে স্পেয়ার পার্টস সংকটই সবচেয়ে তীব্র। আমরা এরই মধ্যে ডেমু ট্রেনের পার্টস সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। পার্টস সংগ্রহ হলেই আমাদের প্রকৌশলীরাই নিজস্ব প্রযুক্তিতে ট্রেনগুলো মেরামত করতে সক্ষম হবেন।

আমদানির পর প্রথম এক বছর চীনা কোম্পানির প্রতিনিধিরা ডেমু ট্রেনের নিয়মিত মেরামত কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু রেলওয়েতে ডেমু মেরামতে আধুনিক কোনো কারখানা না থাকায় প্রতিনিয়ত জটিলতার মুখে পড়ে রেলের প্রকৌশল বিভাগ। প্রযুক্তিগত জটিলতায় আমদানির পর থেকে শিডিউল মেরামত করা হয়নি কোনো ডেমু সেটই। এসব কারণে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন রুটের ডেমুগুলোর ত্রুটি ছাড়াও পথিমধ্যে বিকল হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।

চীন থেকে আমদানি করা ডেমু ট্রেনগুলো শুরু থেকেই নানা সমালোচনার মুখে পড়ে। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ডেমু সার্ভিস চালুর শুরুতে যাত্রীরা এতে ভ্রমণে অনাগ্রহী হয়। ট্রেনগুলোর জানালা ওপরের দিকে থাকার পাশাপাশি এসি সুবিধা না থাকায় গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম অনুভব করে যাত্রীরা। বাংলাদেশে আমদানির পর এসব ত্রুটি সারিয়ে নিতে রেলওয়ে প্রকৌশলীরা কাজ করেন। তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে ডেমু ট্রেনে বৈদ্যুতিক পাখা লাগান এবং বেশকিছু কাঠামোগত উন্নয়ন করেন। তবে প্রতি সেট ডেমুর দুদিকে ইঞ্জিন থাকায় একটি ইঞ্জিন বিকল হলেই পুরো সেটটি অকেজো হয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের প্রকৌশল বিভাগের এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, মূলত শীতপ্রধান দেশ ও স্বল্পদূরত্বে যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হালকা যান হিসেবে ডেমু ট্রেন বিদেশে জনপ্রিয় হলেও ডেমু সার্ভিস চালানোর মতো পরিবেশ বাংলাদেশে নেই। এছাড়া বাংলাদেশে আমদানি করা ডেমু ট্রেনগুলোর কাঠামো খুবই হালকা। ফলে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি, সংঘর্ষ ও ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটছে।

সুত্র:বণিক বার্তা,ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.