শিরোনাম

রেলের দুষ্টচক্র ভাঙতে ১৬ সিদ্ধান্ত

রেলের দুষ্টচক্র ভাঙতে ১৬ সিদ্ধান্ত

শিপন হাবীব :

রেলের যাত্রীসেবা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য ছিল বছরজুড়েই। রেলের দুষ্টচক্র বা অব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলেও অসন্তোষ রয়েছে। রেলের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে এবার কঠোর অবস্থানে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। নতুন বছরের প্রথম দিন সংশ্লিষ্টদের কঠোর বার্তা দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন পর্যায়ে রেলের ৩৭ জন স্টাফের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পর বুধবার রেলভবনে বিভাগীয় প্রধান, প্রকল্প পরিচালকসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের তিনি ১৬টি সিদ্ধান্ত ধরিয়ে দেন। নানা দোষে দুষ্ট কর্মকর্তাদের তালিকা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, টিকিট নিয়ে ‘নয়ছয়’, চলমান প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত, সিডিউল ঠিক রেখে ট্রেন চালানোর ব্যত্যয় হলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিশ্চিত করতে হবে রেলপথের নিরাপত্তা। ফাঁকিবাজি ও ঢিলেমির দিন শেষ। সূত্র বলছে, বৈঠকে উপস্থিত সবাই পিনপতন নীরবতায় মন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। বৈঠক শেষে পদস্থ কর্মকর্তাদের কারও কারও মধ্যে অনেকের মধ্যে আতঙ্কও দেখা যায়।

জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক শামছুজ্জামান বলেন, আমরা ১৬টি লিখিত সিদ্ধান্ত পেয়েছি। এ ছাড়াও চলমান প্রকল্প দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন, রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা কিংবা অনিয়ম থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বছরের প্রথম দিন থেকেই আমরা আমাদের ঘাটতিগুলো পূরণ এবং যাত্রী নিরাপত্তা-সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করা হবে। যে হারে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে রেলে আমূল পরিবর্তন আসবে। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হবে। উনিশ থেকে বিশ হলেই নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৬ দফা সিদ্ধান্ত বা নির্দেশাবলির মধ্যে রয়েছে- রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ড্রেস কোর্ট পরিধান, নির্ধারিত সময়ে আধুনিক রানিং রুম নির্মাণ, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে যাত্রী উঠলেই সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধভাবে লেভেল ক্রসিং, রাস্তা নির্মাণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে ব্যত্যয় ঘটলেই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ট্রেন পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের বিশেষ ওয়াকিটকি দেয়া হচ্ছে। শীতকালীন সময়ে ফ্রকলাইন ব্যবহার নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে বহু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি বিশেষ প্রকল্প ছাড়াও ১২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে মুখোমুখি সংঘর্ষ, বারবার লাইনচ্যুতির ঘটনায় রেলের উন্নয়নে বিপুল অঙ্ক ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয় জনমনে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলপথে ঝুঁকি রয়েই গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ রেললাইন, আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়া রেলওয়ে ইঞ্জিন-যাত্রীবাহী কোচ দিয়ে ট্রেন পরিচালনাও চলছে। বিশেষ করে বিদায়ী বছরের শেষের দিকে পরপর কয়েকটি বড় ট্রেন দুর্ঘটনা রেলযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এসব দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩১ জন মারা গেছে। এসব নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভও সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকার রেলের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে।

কথা হয় রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, রেলে দুর্ঘটনাসহ রক্ষণাবেক্ষণহীন রেলপথ ভাবিতে তুলছে। দুর্ঘটনা রোধসহ যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একের পর এক বৈঠক হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যর্থতার প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একান্ত আলাপচারিতায় মন্ত্রী এই প্রতিবেদকে বলেন, ট্রেনের চালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টারদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। রেলপথ, রেলওয়ে অপারেশন, ট্রাফিক, মেকানিক্যাল, প্রকৌশল বিভাগসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তবলি বাস্তবায়নে দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে নেয়া রেলের দুটি প্রকল্প এবং আরও ১২টি মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প পরিচালকদের শতভাগ জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী কোচ ও লোকোমোটিভ আমদানি, ডুয়েলগেজ নির্মাণ, মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তর, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন নির্মাণ, ঢাকা-কক্সবাজার টুরিস্ট ট্রেন চালুসহ বুলেট ও ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর কাজ চলছে।

আমেরিকা থেকে শক্তিশালী লোকোমোটিভ ক্রয় করতে এবং রেল পরিচালনা কার্যক্রম দেখতে আগামী ১২ জানুয়ারি রেলপথমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আমেরিকায় যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে জানান, আমেরিকায় লোকোমোটিভগুলো খুবই শক্তিশালী। রেলে এখনও যেসব আমেরিকান লোকোমোটিভ চলছে সেগুলো খুবই শক্তিশালী। আমরা আমেরিকা থেকে ৪০টি লোকোমোটিভ ক্রয় করতে যাচ্ছি। ১২ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানকার ইঞ্জিন তৈরির কারখানাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো পরিদর্শন করব। আমরা প্রস্তাব দেব, শুরুতে ১০টি ইঞ্জিন দ্রুত সময়ের মধ্যে দেয়ার জন্য। বাকি ৩০টি ইঞ্জিন পর্যায়ক্রমে আনা হবে। এসব ইঞ্জিন শক্তিশালী হওয়ায় বহু যাত্রীবাহী কোচ এবং মালবাহী বগি নিয়ে চালানো সম্ভব হবে। চলমান ট্রেনগুলোর চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি কোচ নিয়ে ইঞ্জিনগুলো চলতে পারবে।

সুত্র:যুগান্তর, ০২ জানুয়ারি ২০২০



About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.