মোহাম্মদ অংকন:
পবিত্র ঈদ উপলক্ষে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অগ্রিম টিকিট শুধু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হতো। টিকিট সংগ্রহ করতে হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখার মতো থাকত। টিকিট সংগ্রহের জন্য দাঁড়ানো মানুষের লাইন শেষ হতে না হতেই নির্ধারিত টিকিট শেষ হয়ে যেত, যা চিরাচরিত সত্য। একটি মাত্র স্টেশন কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। এ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ দরকার হয়ে পড়েছিল। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে লেখালেখি করেছিলাম বিস্তর। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শুধু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টারে দেওয়া হবে কেন? অন্যান্য স্টেশন কাউন্টারে কি দেওয়া যায় না? এ বছর এসে শুনলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে শহরের পাঁচটি স্থানে চলছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম। স্থানগুলো হল- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও মিরপুর। গাজিপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে অগ্রিম টিকিট দেওয়ার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয় নাই। হয়তো আগামী ঈদে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবেন। ঈদযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিভিন্ন স্থানে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম সত্যই প্রশংসনীয় এবং কাঙ্ক্ষিত যাত্রীদের জন্য শুধু মঙ্গলজনকই নয়, সুবিধাজনকও বটে।
ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা নিয়ে বিড়ম্বনা, ভোগান্তি ও প্রতিবন্ধকতা সীমাহীন বলেই প্রতীয়মান। উত্তরবঙ্গের মানুষের টিকিট কাটতে যেতে হচ্ছে এক স্টেশনে, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের টিকিট কাটতে যেতে হচ্ছে অন্যখানে। কোনখানে কোন বঙ্গের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে, তা জানার তাত্ক্ষণিক কোনো উপায় মানুষের জানা নেই। অফিস, আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব বাদ দিয়ে মানুষ যখন স্টেশনে গিয়ে দেখে যে এখানে নয় অন্য স্টেশনে তার গন্তব্যের টিকিট বিক্রি হচ্ছে, তখনই মানুষের মেজাজ-মর্জি গরম হয়ে যায়। এটা কোনো সিস্টেম হলো? এক সিস্টেম থেকে মুক্তি মিলল তো আবার আরেক সিস্টেম জাপটে ধরল। এটা নিশ্চিতরূপে বলা যায়, এসবই বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তগত ভুল যা সহ্য করতে হচ্ছে জনসাধারণকে। আগামীতে এ সিস্টেমের পরিবর্তন আশা করছি। প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিটি স্থানে ভ্রমণের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করাপূর্বক টিকিট কাউন্টার বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সার্বজনীন টিকিট প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে যাত্রীরা ঈদের অগ্রিম টিকিট বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে। এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে দৌড়ে বেড়াতে হবে না কাউকে।
অনলাইনে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট সংগ্রহ সিস্টেম- এটি আরেকটি বিড়ম্বনা, ভোগান্তি ও অস্বস্তির নাম। বিশেষ করে পবিত্র ঈদের সময়ে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষকে স্বস্তি দিতে ট্রেনের অর্ধেক টিকিট অনলাইনে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ‘রেলসেবা’ নামক একটি অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়; কিন্তু ‘সার্ভারে ত্রুটি’র কারণে আপাতত তা আর আলোর মুখ দেখেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অভিযোগ- ‘বিক্রি শুরুর আগেই টিকিট শেষ’, ‘টিকিট না দিয়েই টাকা কেটে রাখা’ ইত্যাদি। জানা গেছে, ‘রেলসেবা অ্যাপস’র মাধ্যমে ৫০ শতাংশ টিকিট মোবাইল ফোনের এসএমএস, ওয়েবসাইট ও ফিচার অ্যাপসের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। অথচ গ্রাহকদের সেবা নিতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে উল্টো ঝামেলায়। যেসব গ্রাহক অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটবেন বলে ভেবেছেন তারা স্টেশনে গিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে বাসায় বসে সময় গুনছেন কখন সকাল ৯টা বাজবে; কিন্তু সকাল ৯টায় সার্ভারে ঢুকতে পারছেন না অধিকাংশ গ্রাহক। আর যদিও কোনোভাবে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে সার্ভার থেকে জানানো হচ্ছে টিকিট নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতেই হয়, ৯টার পরপরই ৫০ শতাংশ টিকিট কীভাবে শেষ হয়ে যায়? এটি কীভাবে সম্ভব? এত দেখছি, সব ভূতুরে কাণ্ডকারখানা!
নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে খাতটি বর্তমানে বেশ সফলতামুখী। ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ, নতুন স্টেশন স্থাপন, পুরাতন ইঞ্জিন পরিবর্তন, স্বল্প বিরতির ট্রেন চালুকরণের মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধি করায় মানুষের ট্রেন ভ্রমণের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। টিকিট বিড়ম্বনা, যথাযথ সময়ে ট্রেন স্টেশনে না পৌঁছানো, টিকিট কালোবাজারি- এরকম কিছু বিষয় দূরীকরণ করতে পারলে ট্রেনের জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান করছি, বাংলাদেশ রেলওয়ে খাতকে সিন্ডিকেটমুক্ত করে যাত্রীদের ভ্রমণে, দেশের রাজস্ব অর্জনে যুগান্তকারী সফলতা বয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক ও বাস্তবায়নে কাজ করা হোক।
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি), ঢাকা
সুত্র:ইত্তেফাক, ২৭ মে ২০১৯,