নিউজ ডেস্ক: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও অনলাইনে ও অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট কাটতে না পারার অভিযোগ করেছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। গতকাল সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ পাঁচটি স্থানে টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাশপাশি বিক্রি চলে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমেও। আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন ঢাকা থেকে বিক্রি হওয়ার কথা ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকিট। সবচেয়ে বেশি ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে কমলাপুর রেলস্টেশনে।
অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপ থেকে টিকিট কিনতে না পেরে অনেকে কাউন্টারে চলে এসেছেন। রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কিনতে ভোর ৫টায় কমলাপুর স্টেশনে আসেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী নাহিদ হাসান। সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহীর ১ জুনের টিকিটের জন্য বাসার কাছে একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অনেকবার চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট কিনতে পারিনি। এ জন্য কমলাপুর চলে আসলাম। পরে দুপুর দেড়টার দিকে কাক্সিক্ষত টিকিট পেয়েছি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আমানুল্লাহ বগুড়া যাওয়ার জন্য অনলাইনে চেষ্টা করেও টিকিট পাননি। তিনি বলেন, লালমনি এক্সপ্রেস এবং রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য চেষ্টা করেছি। সার্ভার ওপেন হয়। ট্রেন সিলেক্ট অপশন পর্যন্ত যাওয়া যায়। এরপর থেকে শুধু লোড নিতে থাকে। টিকিট আর আর কাটা যায় না। এ জন্য এখানে চলে এসেছি। দেখি টিকিট পাই কি না। একই অভিজ্ঞতা রাজধানীর মুগদা এলাকার বাসিন্দা সোহেল মাহমুদের; খুলনা যাওয়ার টিকিটের জন্য কমলাপুরে আসেন তিনি। তার ভাষ্য, অ্যাপস খুলেই না। দুই দিন চেষ্টা করে বিফল হয়েছি। বাধ্য হয়ে কাউন্টারে দাঁড়ালাম।
জয়পুরহাটে যাওয়ার জন্য দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য এসেছেন জিয়াউর রহমান। রেল?ওয়ের মোবাইল অ্যাপসে টিকিট কিনতে না পেরে ক্ষুব্ধ জিয়া বলেন, এটা শুধু শুধু করেছে। এতবার চেষ্টা করলাম, খালি নট ফাউন্ড দেখায়। এ অ্যাপসে চেষ্টা না করাই ভালো। এইডা জনগণরে বোঝানোর জন্য দিছে আর কি। তারা দেখাচ্ছে যে তারা আপডেট হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিএন?এসবিডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কবিরুল আলম সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিদিন ১১ হাজার টিকিট থাকে অনলাইনে বিক্রির জন্য। টিকিট বিক্রির প্রথম দিন মোট টিকিটের ৭১ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। এতগুলো টিকিট কীভাবে বিক্রি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুধু স্টেশন দেখভাল করি। বিক্রির তথ্য দিয়েছে সিএন?এসের মূল কার্যালয়ের টেকনিক্যাল বিভাগ। তারা এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে।”
এদিকে কাউন্টারে সাধারণ টিকিট পাওয়া গেলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট সকালেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে কাক্সিক্ষত টিকিটও পাচ্ছেন না অনেকে। সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার চারটি টিকিটের জন্য এসেছেন খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা শাহজাহান খান। তবে কাক্সিক্ষত টিকিট পাননি তিনি। তিনি বলেন, এসি চেয়ার, প্রথম শ্রেণি কোথাও সিট পাইনি। জোরাজুরি করার পর তিনটি টিকিট দিয়েছে আমাকে। এর মধ্যে এসি কেবিনে দুটি সিট আবার দুই রুমের। আমি যাব এক কেবিনে, স্ত্রী যাবে আরেক কেবিনে। আরেকটি শোভন চেয়ারের সিট দিয়েছে আরেক বগির। এখন একেকজন একেক কামরায় যেতে হবে।
টিকিট কাউন্টারে এসি টিকিট কিনতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। এ জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।
এদিকে আজ ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং ৪টা বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকিট বিক্রি হবে। কমলাপুর স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে কাউন্টার থেকে পাঁচ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপে আট হাজার ১৫১টি টিকিট বিক্রি হবে। এছাড়া বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৮৭৯টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৪৮টি অনলাইনে এবং দুই হাজার ৩৩১টি টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে।
তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী পাঁচটি ট্রেনের তিন হাজার ৪৪৪টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে বিক্রি হবে। বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকিট বিক্রি হবে। ৬৪৪টি টিকিট অনলাইনে বাকি ৬১৪টি টিকিট কাউন্টারে দেওয়া হবে। ফুলবাড়িয়া পুরোনো রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের সাতটি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৫৪৮টি টিকিট বিক্রি হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৫১টি টিকিট অনলাইনে এবং দুই হাজার ২৯৭টি টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হবে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকিট। বিশেষ ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে ২৪ মে থেকে।
সুত্র:শেয়ার বিজ,মে ২৪, ২০১৯