শিরোনাম

রেল ওয়াগনে পণ্য রপ্তানি


।। রেল নিউজ ।।
স্বপ্ন নয়, এবার বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে রেল ওয়াগনে বাংলাদেশী গার্মেন্টস পণ্য ঢাকা থেকে বেনাপোল হয়ে ভারত থেকে ইউরোপে পাঠানোর। এ লক্ষ্যে রেল ওয়াগনে পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি পত্র জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে পাঠানো হয়েছে। এটি চালু হলে রপ্তানি বাণিজ্য আরো সহজ হবে, খরচও কমবে।

এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এমনটাই জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা। তবে কবে থেকে এ পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব শীঘ্রই এটি চালু হবে। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৪ টি স্থল ও শুল্ক বন্দর রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর বেনাপোল। ভারতের সঙ্গে এই বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে এই বন্দরের অবস্থান শীর্ষে। বলা চলে বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি ও ৫০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়।

পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভারত থেকে যেসব আমদানি পণ্য নিয়ে কনটেনার ট্রেন বাংলাদেশে আসার পর পণ্য খালাস করে খালি ফিরে যায় ওসব খালি ট্রেনে রপ্তানি পণ্য ভারতে পাঠানোর জন্য। ব্যবসায়ীদের এই দাবির প্রেক্ষিতে এবার পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চিঠি প্রাপ্তির পর এ কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ বন্দর রেল ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। খুব শীঘ্রই এই কার্জক্রম চালু হবে বলে এমনটাই জানিয়েছেন তারা।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেকপোস্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ (বিপুল) জানান, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে বর্তমানে আমাদের যে ভারত থেকে ট্রেনগুলোতে করে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আসে ওই সকল পণ্য আনলোড করে বাংলাদেশ থেকে যখন ট্রেনটি খালি ফেরত যায় তখন ওই ট্রেনে করে আমাদের বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার একাধিকবার আমাদের ও স্টকহোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছেন। আমি মনে করি, যেভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে খুব দ্রুত বেনাপোল থেকে ভারতীয় ট্রেনে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার ওব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, আমরা রেলে করে যদি ভারতে মাল পাঠাতে পারি তাহলে চারদিনে বোম্বে পৌঁছবে এবং বোম্বের পাশে একটা ডিপসি রয়েছে যার নাম নব-শীবা বন্দর। সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন বন্দরের পণ্য পৌঁছে যাবে ২০ দিনের ভেতর।

আর চিটাগাং থেকে একটা পণ্য পাঠাতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন লাগে এবং খরচ ব্যাপক। আর বেনাপোল থেকে একটা ট্রাকে যদি আমরা বোম্বের দিকে পণ্য পাঠাই তাহলে এক লাখ টাকা লাগবে, পাশাপাশি সময় লাগবে ১০ দিন। কিন্তু ট্রেনে যদি পাঠায় তাহলে সময় লাগবে ৪ দিন এবং খরচও অনেক কম।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার শাফায়েত হোসেন জানান, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দেশের সার্বিক উন্নয়ন কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভর করছে। এ মুহূর্তে আমাদের রপ্তানি যদি বাড়াতে পারি তাহলে বেশি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে ও দেশের সমৃদ্ধি হবে। আর সেজন্যই কাস্টমস হাউজ বেনাপোল সেই কাজ করে যাচ্ছে।

সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোডের্র নির্দেশনা রয়েছে কিভাবে ট্রেনে করে পণ্য রপ্তানি করা যায় সেই বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় মিটিং হয়েছে।ু তো খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য ট্রেনযোগে শুরু হবে। ট্রাকের মাধ্যমে যে পণ্য রপ্তানি হয় পাশাপাশি খুব দ্রুত ট্রেনের মাধ্যমেও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে।
উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) বেনাপোল মনিরুল ইসলাম জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ট্রেনযোগে আমদানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় আমাদের রপ্তানি পণ্য ট্রেনে কিভাবে আমরা রপ্তানি করতে পারি তার এসওপি (স্ট্যান্ডার অপারেটিং প্রসিডিউর) তৈরি করার জন্য চলতি মাসের ২ তারিখে কাস্টমস কমিশনার মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। বন্দর সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। একটা এসওপি তৈরির মাধ্যমে আমরা দ্রুত এ রপ্তানি কার্যক্রম ট্রেনের মাধ্যমে শুরু করতে যাচ্ছি এবং সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসওপি তৈরির পরই মূলত এই কার্যক্রম শুরু হবে।
বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ থেকে এই প্রথমবারের মতো রেল ওয়াগনে করে পণ্য রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোপূর্বে ওয়াগনযোগে পণ্য আমদানি হতো কিন্তু খালি ওয়াগনে পণ্য রপ্তানি হতো না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বৈঠক করে দ্রুত যে অবকাঠামো সমস্যা আছে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেবে এবং দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হলে রেল ওয়াগন যোগে পণ্য রপ্তানি চালু হবে।
চার ধরনের ট্রেনে করে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করা হয়। এর মধ্যে আছে এনএমজি যার্ক, বিসিএন ওয়াগন, কনটেনার ও পার্সেল ট্রেন। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৮৮টি ট্রেনে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাংলাদেশে এসেছে। ভারত থেকে আসা এসব কনটেনার ট্রেনের প্রতিটি বগি ২০ ফুট লম্বা ৬০টি অথবা ৪০ ফুট লম্বা ৩০টি করে কনটেনার থাকে। আমদানি পণ্যের জন্য ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও রেল ওয়াগনে পণ্য রপ্তানি এখনো শুরু না হওয়ায় ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সূত্রঃ দৈনিকজনকণ্ঠ


Comments are closed.