শিরোনাম

১৩১ বছরের পুরোনো আইনে চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে

১৩১ বছরের পুরোনো আইনে চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে

ইসমাইলআলীবাংলাদেশ অঞ্চলে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। সে সময় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতী পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেলপথ চালু করা হয়। ১৮৮৫ সালে চালু করা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথ। পরের বছর তা জয়দেবপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। আর ১৮৯৫ সালে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ১৪৯ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার লাইন দুটি চালু করা হয়।

এভাবে রেলওয়ে সেবা সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে এ অঞ্চলে। তাই এ সেবাকে একটি কাঠামোতে আনা ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠায় ১৮৯০ সালে ‘রেলওয়েজ অ্যাক্ট ১৮৯০’ প্রণয়ন করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৩১ বছরের সেই আইন দিয়েই এখনও পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যদিও স্বাধীনতার পর আইনটির কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনা হয়। এতে বিভিন্ন বিষয়ে জরিমানা ও রেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানো হয়।

এদিকে সাম্প্রতিককালে রেলওয়েতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া জরিমানা ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বর্তমান সময়ের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩১ বছরের পুরনো আইনটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এজন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে পরামর্শক।

সম্প্রতি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইনটির একটি খসড়া জমা দিয়েছে। এতে রেল পরিচালনায় বিভিন্ন নতুন বিষয় যুক্ত করার পাশাপাশি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিমা তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া রেলসেবায় বাধা প্রদানসহ নানা বিষয়ে শাস্তির বিধান বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়াটি পর্যালোচনায় আগামীকাল রাজধানীর রেলভবনে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার বা রেলওয়ে প্রশাসন ‘বিমা তহবিল’ নামে একটি তহবিল গঠন করতে পারবে। বিমা তহবিলের উৎস হবে আইনের ৪২খ ও ৬১ ধারার অধীনে প্রাপ্ত বা আদায়কৃত চার্জ, সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদান, রেলওয়ে প্রশাসন থেকে প্রদত্ত মঞ্জুরি ও অন্য কোনো বৈধ উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ। বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিমা তহবিলের পৃথক হিসাব কোডে জমা ও সংরক্ষণ করা হবে। আর আইনের ৮২ক ও উপ-ধারা (২)-এর অধীনে রেলওয়ে প্রশাসন কর্তৃক প্রদেয় ক্ষতিপূরণ বিমা তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে।

ট্রেনে ভ্রমণের জন্য কারও নামে টিকিট কাটা হলে তা হস্তান্তর না করার জন্য আইনটিতে নতুন আরেকটি ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো নির্দিষ্ট আসন বা বার্থের টিকিট কাটলে তাতেই ভ্রমণের শর্ত যুক্ত হবে। এক্ষেত্রে চাইলেই যাত্রী আসন বা বার্থ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো রেল কর্মচারী যাত্রীর অনুরোধে তার আসন পরিবর্তনের অনুমোদন দিতে পারবেন।

এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রী মারা গেলে এবং তার সঙ্গে ট্রেনের টিকিট থাকলে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে। নতুন আইনে এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। আর ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের নির্দিষ্ট কোনো ক্ষতিপূরণের কথা বিদ্যমান আইনে উল্লেখ নেই। তবে নতুন আইনে অঙ্গহানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, স্থায়ী অন্ধত্বের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, স্থায়ী শ্রবণশক্তি লোপের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ও হাড় ভাঙা বা কোনো হাড়ের অবস্থান চ্যুতি বা দাঁত পড়ে গেলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।

এর বাইরে বিভিন্ন শাস্তির বিধানও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আইনটির খসড়ায়। এর মধ্যে অকারণে অ্যালার্ম চেইন টেনে ট্রেন থামালে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। বর্তমানে সেক্ষেত্রে এক মাসের কারাদণ্ড বা ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য স্থানে ট্রেন থামালে অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে, বর্তমানে যা ৫০ টাকা।

এদিকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে টিকিট বা পাস ছাড়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনধিক তিন মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। তবে প্রতারণার অভিপ্রায় না থাকলে যে দূরত্বে ভ্রমণ করা হবে তার ভাড়া ও অতিরিক্ত চার্জ বা জরিমানা দিতে হবে। আর ট্রেনের ভেতর কোনো যাত্রী ধূমপান করলে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে, বর্তমানে যা ২০ টাকা।

এর বাইরেও নতুন আইনে বেশকিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আর আগের আইনে ট্রেনে নারীদের জন্য কমপক্ষে একটি কোচ রিজার্ভ রাখার শর্ত ছিল। কোনো ট্রেন ৫০ মাইলের বেশি রুটে চলাচল করলে এ শর্ত প্রযোজ্য ছিল। তবে নতুন আইনে তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএম মজুমদার বলেন, রেলওয়ের পরিচালনার আইনটি অনেক পুরনো। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত সে আইনের অনেক বিষয় বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য নয়। আবার নতুন নতুন বিষয়ও যুক্ত হয়েছে রেলসেবায়। তাই আইনটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৯ সালে। এরপর পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি তারা আইনটির খসড়া জমা দিয়েছে। এটি পর্যালোচনা শেষে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত নেয়া হবে। তারপর আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্র:শেয়ার বিজ, জুন ১৮, ২০২১ 


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.