ইসমাইল আলী: বাংলাদেশ রেলওয়ের ইঞ্জিনের বড় অংশের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে বহু আগেই। মাঝেমধ্যে পথেই বিকল হয়ে পড়ে এসব ইঞ্জিন। ফলে ২০১১ সালে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। তবে এক দশকেও ইঞ্জিনগুলো কেনা সম্পন্ন হয়নি।
এদিকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণে ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার জন্য সম্প্রতি চুক্তি করেছে রেলওয়ে। তবে এজন্য গুনতে হচ্ছে উচ্চ সুদ। সঙ্গে আরও কিছু বাড়তি শর্ত জুড়ে দিয়েছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। এতে ঋণচুক্তি এখনও সই করা যায়নি। আবার ইঞ্জিনের মূল্য এলসি ছাড়াই পরিশোধের শর্ত দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম। এক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ৩৫ শতাংশ অগ্রিম প্রদানের কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি, যদিও তা মেনে নেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে ইঞ্জিনগুলো কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে রেলওয়ে।
সম্প্রতি প্রকল্পটির ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির বৈঠকে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে জানানো হয়, হুন্দাই রোটেম থেকে ৭০টি ইঞ্জিন কেনার প্রস্তাবটি ২০১৮ সালের ১৬ মে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি) অনুমোদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছর ১০ অক্টোবর ইঞ্জিনগুলো কেনায় প্রায় ২৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি সই করে রেলওয়ে।
চুক্তি অনুসারে ১৮ থেকে ৬০ মাসের মধ্যে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করার কথা। তবে ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ঋণচুক্তি সই হয়নি। এতে ইঞ্জিনগুলো কেনার প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কঠিন শর্তের কারণে এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়নি।
তথ্যমতে, ইঞ্জিনগুলো কেনার জন্য ঋণ প্রস্তাবটি ২০১৮ সালের ৭ জুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে সে বছর ৩০ জুলাই অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দরকষাকষি ও ঋণচুক্তি কার্যক্রম শুরু করে ইআরডি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ঋণ প্রস্তাব পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে মিগা ফ্যাসিলিটির পরিবর্তে কে-এক্সিম ও কমার্শিয়াল ফ্যাসিলিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টি ২৪ জুলাই সিসিজিপি ও ১৯ আগস্ট ইআরডি সচিবকে অবহিত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে পরিবর্তিত শর্তে দরকষাকষি ও ঋণচুক্তি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পত্র দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, ৭০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কিনতে ঋণ দেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও জাপানের সুমিতোমো মিটসুই ব্যাংকিং করপোরেশন (এসএমবিসি)। ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৮ কোটি দুই লাখ ৩২ হাজার ডলার।
চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ঋণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে কে-সিউরের আওতায় ঋণ দেওয়া হবে প্রায় ১১ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। কে-এক্সিম গ্যারান্টিড ফ্যাসিলিটির আওতায় দেওয়া হবে প্রায় চার কোটি ২২ লাখ ২৫ হাজার ডলার ও কে-এক্সিম সরাসরি ফ্যাসিলিটির আওতায় দেওয়া হবে প্রায় সাত কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ডলার।
চুক্তি সইয়ের ৬০ মাসের মধ্যে এ তিন ধরনের ঋণ ছাড় করতে হবে। এর মধ্যে কে-সিউর ঋণের সুদহার হবে ছয় মাস মেয়াদি লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে এক দশমিক ৫৫ শতাংশ যোগ করে নির্ধারিত হারে। এর সঙ্গে ইসিএ প্রিমিয়াম যুক্ত হবে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর কে-এক্সিমের দুই প্যাকেজের সুদহার হবে ছয় মাস মেয়াদি লাইবরের সঙ্গে দেড় শতাংশ যোগ করে নির্ধারিত হার। এক্ষেত্রে ইসিএ প্রিমিয়াম ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এর বাইরে চতুর্থ প্যাকেজের আওতায় চার কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সুদহার হবে ছয় মাস মেয়াদি লাইবরের সঙ্গে এক দশমিক ৬০ শতাংশ যোগ করে নির্ধারিত হার। আর ইসিএ প্রিমিয়াম সাড়ে তিন শতাংশ। এ প্যাকেজের ঋণচুক্তি সইয়ের ৩৬ মাসের মধ্যে ছাড় করতে হবে।
ঋণের এ চার প্যাকেজেই ম্যানেজমেন্ট ফি (ঋণের) দেড় শতাংশ হারে। এছাড়া কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে বছরে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ ঋণ প্রতি বছর ছাড় হবে, বাকিটার ওপর কমিটমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া প্রতি প্যাকেজের ঋণের জন্য আলাদাভাবে এজেন্ট ফি দিতে হবে ২০ হাজার ডলার। আর চতুর্থ প্যাকেজের জন্য পৃথক ৪০ হাজার ডলার লিগ্যাল ফি দিতে হবে। সব মিলিয়ে সুদের হার সার্বিকভাবে ১০ শতাংশের কাছাকাছি পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুত্র:শেয়ার বিজ, মার্চ ৩, ২০২০