শিরোনাম

লোহার পাত ও স্লিপার হচ্ছে চুরি, দখল হচ্ছে রেলের শত শত একর জমি

ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন :

উধাও হয়ে যাচ্ছে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ। রেল নেই, পাতও নেই। নেই রেললাইনের তেমন কোনো চিহ্ন। রেলপথ পরিণত হয়েছে সড়কপথে। বিলোনিয়ার রেলগাড়ি ছিল একসময়ের ফেনীর উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্য। ফেনী-বিলোনিয়া ২৮ কিলোমিটার রেলপথের এমন চিত্র এখন।

জানা গেছে, লোকসানের অজুহাতে ১৯৯৭ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেনী-বিলোনিয়া রেল যোগাযোগ। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় রেললাইনের লোহার পাত, স্লিপার  চুরিসহ দখল হয়ে গেছে রেলওয়ের শত শত একর জমি। এসব নিয়ে লাকসাম জিআরপি থানায় ১০/১২টি মামলা হলেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি। এদিকে সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধান সভার স্পিকার পবিত্রকর ফেনী সফরে এসে জানান, তাদের সরকার ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথটি চালু করতে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

দু’দেশের মধ্যে আলোচনা মধ্য দিয়ে ভারত সরকার এ কাজ করতে আগ্রহী। এদিকে ফেনী-বিলোনিয়া রেল রুটটি সংস্কার ও পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ভাড়াতে চায় ভারত। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভুটান ও চীন পরিবেষ্টিত ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন সহজ করার লক্ষ্যে বিলোনিয়া রেললাইনটি পুনরায় চালু করতে ভারত আগ্রহী বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি ১৯২৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক সরকারি আদেশের মাধ্যমে ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের জন্য ২৫ গ্রামের ২৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ১৯২৯ সালে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ চালু হয়। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পথে বন্দুয়া, দৌলতপুর, আনন্দপুর, পীরবক্স মুন্সীরহাট, নতুন মুন্সীর হাট, ফুলগাজী, চিথলিয়া, পরশুরাম ও বিলোনিয়ায় আটটি স্টেশন স্থাপন করা হয়। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় একসময় এই রেলপথ ছিল পরশুরাম, ফুলগাজীসহ ফেনীর উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একমাত্র মাধ্যম। ১৯৭১ সালের পর রেল যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় কদর কমে যায় রেলপথের। ব্যাপক লোকসানের কারণে ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট কর্তৃপক্ষ ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ বন্ধ করে দেয়।

২০১২ সালে তৎকালীন যোগাযোগ ও রেলপথ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরশুরাম ডায়াবেটিস হাসপাতালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফেনী-বিলোনিয়া রেল যোগাযোগ মেরামত করতে ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি রেললাইনের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদ করবেন বলে ঘোষণা দেন। কয়েকবার ফেনী-বিলোনিয়া রেল চালুর ঘোষণা দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সরেজমিন জানা গেছে, ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথের বেশিরভাগ এখন অবৈধ দখলে। রেললাইনের স্টেশনগুলোর অস্তিত্বও নেই। রেললাইনের লোহার পাত, সি¬পার মাইলের পর মাইল তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মুন্সীর হাট, মোহাম্মদপুর, গাইনবাড়ি, বন্দুয়াসহ বহু জায়গায় রেললাইনের কোনো চিহ্ন নেই। পরিত্যক্ত রেল স্টেশনগুলোতে প্রতিনিয়ত বসছে মাদকের আস্তানা আর বখাটেদের আড্ডা। রেললাইন এখন পরিণত হয়েছে সড়কপথে। দখল হয়ে গেছে রেলওয়ের শত শত কোটি টাকার ভ‚মি। প্রভাবশালীরা রেলের জায়গায় তৈরি করেছে দালান।

ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আইনুল কবির শামীম জানান, পরশুরামের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিলোনিয়া অংশে বিলোনিয়া স্থল বন্দর রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন জিনিসপত্র রপ্তানিও হচ্ছে। ফেনীর বিলোনিয়া রেলপথটি চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা বাড়ার পাশিপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে। এতে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে বলে জানান তিনি। বর্তমানে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম খুবই সীমিত। বিলোনিয়া রেলপথটি পুনরায় চালু হলে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন খুবই সহজ হবে।

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম জানান, ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইনের সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। এই রেলপথ চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিলোনিয়া স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে রেললাইনের সম্পত্তি। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকলে অচিরেই ওই রেলপথের সব সম্পদ লুটপাট হয়ে যাবে। পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার জানান, ২৮ কিলোমিটার এ রেল সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আর না হয় অন্তত বাকি যে রেললাইন রয়েছে তা সংরক্ষণ করলে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হবে। রেললাইনের সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

 

সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.