শিরোনাম

চালকবিহীন ট্রেন চলছে হামবুর্গে


।। আন্তর্জাতিক ।।
শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ বাঁচানোর তাগিদ, কর্মীসংখ্যার অভাব – এমন সব সমস্যা সত্ত্বেও পরিবহণ অবকাঠামোর উন্নতির চাপ বাড়ছে৷ জার্মানিতে এক ঢিলে সব পাখি মারতে নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷

হামবুর্গ শহরে চারটি স্বচালিত ‘এস বান’ বা সাবআর্বান ট্রেন সক্রিয় রয়েছে, যা এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় চলছে৷ জানা গেছে জার্মান রেল কোম্পানি ও পৌর কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল এস-বান প্রকল্পে সব মিলিয়ে ছয় কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছে৷ গণপরিবহণ ব্যবস্থার জন্য সেটা বড় এক পদক্ষেপ৷ কারণ বাড়তি লাইন না বসিয়েই এবার আরও ঘনঘন এবং আরও বেশি ট্রেন চালানো সম্ভব৷

ডিজিটাল এস-বান প্রকল্পের প্রধান ক্রিস্টফ গনসালভেস বলেন, ‘‘ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আমরা রেল ব্যবস্থায় আরও ধারণ ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা আনতে চাই৷ এই প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য হলো, এই প্রথম কোনো চালু রেল প্রণালীর মধ্যে অটোমেটেড ট্রেন চালানো হচ্ছে৷ সেই প্রযুক্তি শুধু সাবআর্বান ট্রেনের জন্য আবিস্কার করা হয় নি৷ এমন প্রযুক্তি পণ্য পরিবহণ, আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক বা দূরপাল্লার ট্রেনেও প্রয়োগ করা সম্ভব৷’’

এই ট্রেনের নীচেই মূল যন্ত্রপাতি বসানো রয়েছে৷ জটিল নামের নানা সিকিউরিটি সিস্টেম পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রাখে, যা ট্রেনের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে৷

ক্রিস্টফ গনসালভেস বলেন, ‘‘এটিও – অর্থাৎ অটোম্যাটিক ট্রেন অপারেশন ইউরোপে অটোমেটেড যানগুলির সাধারণ মানদণ্ড৷ ইটিসিএস – অর্থাৎ ইউরোপিয়ান ট্রেন কনট্রোল সিস্টেম ইউরোপের সাধারণ রেল নিরাপত্তা প্রণালী৷ এই ব্যবস্থা ট্রেনকে অতি দ্রুত চলা বা অতি দূরে যাওয়া থেকে বিরত করে৷’’
এই সব প্রণালী রেল ব্যবস্থাকে আরও সময়নিষ্ঠ ও দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি ৩০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়েও সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে রেল কোম্পানিগুলি অটোনমাস ট্রেনের মাধ্যমে ব্রেকসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষয়ের মাত্রা কমানোর আশা করছে৷ তবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সংশয় এখনো দূর হচ্ছে না৷

সুইকাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ এলেনা কোয়েক মনে করেন, ‘‘কোনো যানের নিয়ন্ত্রণ, যেমন ব্রেক করা বা গতি বাড়ানো আসল সমস্যা নয়৷ যাত্রার প্রক্রিয়ার ধাপগুলি একটি সমস্যা৷ যেমন বিঘ্ন ঘটলে কী হবে? স্বয়ংক্রিয় পরিবহণের ক্ষেত্রে ড্রাইভার উপস্থিত না থাকলে কী ঘটবে? আজকাল সেই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে৷’’ সে কারণে হামবুর্গের স্বয়ংক্রিয় এস-বান ট্রেনে একজন করে চালক রাখা হচ্ছে৷ কারণ অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ সে রকম কিছু ঘটলে ইমার্জেন্সি ব্রেক প্রয়োগ করতে হবে৷

অর্থাৎ শুধু প্রযুক্তিগত কারণেই চালকের উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না, আইনগত কারণেও তাঁর গুরুত্ব রয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, জার্মানির আইন অনুযায়ী এখনো চালকবিহীন ট্রেন চালানো সম্ভব নয়৷ বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বির্গিট মিলিউস বলেন, ‘‘সব ট্রেন চালক ছাড়াই চলবে, বর্তমানে এমন লক্ষ্যমাত্রা কাম্য বা বিশ্বাসযোগ্য বলে আমার মনে হয় না৷ সেটা অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয়৷ কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই চালকবিহীন প্রযুক্তির প্রয়োগ অর্থবহ হতে পারে, যেমন বর্তমানে কর্মীর অভাবের কারণ যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে, তা মেটাতে এভাবে বাড়তি ট্রেন চালানো সম্ভব৷’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, কমপক্ষে বড় শহরাঞ্চলে এই প্রযুক্তির চাহিদা অবশ্যই রয়েছে৷ ভবিষ্যতেও সেখানে আরও বেশি মানুষ ট্রেন ব্যবহার করবেন৷

সূত্রঃ ডিডব্লিউ


Comments are closed.