শিরোনাম

ট্রেনে নারীর জন্য আলাদা কামরা

ট্রেনে নারীর জন্য আদালা কামরা

শান্তা ইসলাম:

যেসব নারী দুধের শিশু নিয়ে ট্রেনে ওঠেন, তারা নির্দ্বিধায় তার শিশুকে দুধ পান করাতে পারেন না। কারণ শত শত নারী-পুরুষে ঠাসা রেলের কামরায় নিজেরা বসতেই অস্বস্তিবোধ করেন। সেখানে শিশুদের দুধ পান করানো আরো কঠিন। তাই নারীর জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ হলে শিশুদের দুধ পান করাতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। পাশাপাশি, ট্রেনে আলাদা কামরা থাকলে ভ্রমণের সময় যদি নামাজের সময় হয়, তখন তারা নিয়মিত সেখানে নামাজও আদায় করতে পারবেন। রাতে কোনো নারী একা ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তাই নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ দিলে নারীরা তাদের কামরায় নির্দ্বিধায় উঠে তাদের আসনে বসতে পারবে। এতে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিও কমবে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী আজমল হোসেন খোকন ট্রেনে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটে রেল মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক, রেলওয়ে পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, গত ১০ মার্চ নারীদের জন্য পৃথক কম্পার্টমেন্টের ব্যবস্থা করতে রেল কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশ প্রদান করা হবে না এবং নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করতে কেন নির্দেশনা প্রদান করা হবে না জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি পৃথক দুটি রুল জারি করেছে উচ্চ আদালত। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে।

এর পূর্বে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে নারীদের জন্য পৃথক কম্পার্টমেন্টের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যার ফলে এ রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন, ১৮৯০-এর ৬৪ ধারার বাস্তবায়ন চেয়ে এ রিট দায়ের করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে আত্ম প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনই আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য। আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে রাষ্ট্র বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সমাজের সব ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট থাকে। নব্বই দশকের শেষ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে বেড়ে উঠতে থাকে, এর প্রতিফলন দেখা যায় বিশেষত নারীর প্রতি পরিবর্তিত বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি থেকে। এ সময়েই মূলত শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপবৃত্তি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই বিতরণ শুরু হয়। পাশাপাশি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকে। সময়ের পরিক্রমায় নারীর অবস্থান আগের তুলনায় দৃশ্যত সুদৃঢ় মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এমনকি রাজনৈতিক অবস্থান এখনো দুর্বল। একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এখনো অনেক আবশ্যিক উদ্যোগ গ্রহণ বাকি রয়ে গেছে।

২০০৮ সাল থেকে দেশের গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত হয়, বড় বাসে ৯টি, মিনিবাসে ছয়টি এবং বিআরটিসি বাসে ১৪টি আসন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’-এর খসড়ায়ও বলা হয়েছিল, ‘গণপরিবহনে নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে তাদের বসতে না দিয়ে অন্য কেউ ঐ আসনে বসলে তিনি এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ তবে বাস্তবে এর প্রয়োগ খুঁজে পাওয়া যায় না। গণপরিবহনে নারীদের হয়রানি ও ভোগান্তির ঘটনা তাই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নারীদের জন্য বাস মাত্র ২১টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চারটি। বিআরটিসির অধীনে কর্মজীবী নারীদের জন্য ঢাকা মহানগরীতে ১৯টি ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে দুটি বাস চলে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। সড়কপথে নারীদের যাতায়াত ব্যবস্থা কিছুটা সহজ করতে নারীদের জন্য আরো বেশি পরিবহন সেবাব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।

ট্রেনে যাতায়াত বাসে যাতায়াতের তুলনায় অনেক কম সময়সাপেক্ষ এবং সাশ্রয়ী। কিন্তু রেল স্টেশনের পরিবেশ, গাদাগাদি ভিড় ঠেলে ট্রেনে চড়া এবং অনেক পুরুষের মাঝে অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক নারী ট্রেনে যাতায়াত এড়িয়ে চলেন। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সেদেশের রেলের সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন, ১৮৯০-এর ধারা ৬৪ অনুসারে ট্রেনে নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দের বিধান থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই।

সূত্র:ইত্তেফাক, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

 


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.