শিরোনাম

রেলে স্বপ্নপূরণ

রেলে স্বপ্নপূরণ

সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালু হওয়ায় পাবনাবাসীর স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষামূলক যাত্রীবাহী ট্রেনটি মাঝগ্রাম জংশন থেকে পাবনার উদ্দেশে রওনা হলে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন থেকে ৩০ সদস্যের একটি টিম নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে টে্েরনর যাত্রা শুরু হয়। এ পথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করলে কম সময়ে পাবনাবাসীর সঙ্গে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর যোগাযোগের পরিধি বাড়বে। পাবনার লোকজনের চিকিৎসা-শিক্ষাসহ নানান কাজে এ ট্রেন সার্ভিস সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিছুকালের মধ্যে পাবনার সঙ্গে রাজশাহী ও আগামী বছরের প্রথমদিকে পাবনার সঙ্গে ঢাকার রেল চলাচল শুরু হবে।

উল্লেখ্য, ঈশ্বরদীর মাঝগ্রাম থেকে ঢালারচর পর্যন্ত মোট ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইনের মধ্যে পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত বাকি ৫৩ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজের দ্বিতীয় ধাপ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। এই রেললাইনের নক্সায় কিছুটা পরিবর্তন এনে রেলপথটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনা শহর হয়ে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই বছরের ৫ অক্টোবর একনেক বৈঠকে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকায়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পাবনা সরকারী এ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯১৪ সালে পদ্মা নদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু হলে সেই সময়েই ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত রেললাইনের দাবি তোলে পাবনাবাসী। বর্তমান সরকার রেলবান্ধব; এ সরকারের আমলে রেলকে আধুনিকায়ন করার বেশ কিছু পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে। এ খাতে সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী যেসব প্রকল্প নিয়েছে, তাতে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো সেবা দেয়া সম্ভব। বর্তমান সরকার ট্রেনকে গণপরিবহনে পরিণত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন রেললাইন স্থাপন, পুরনো লাইন মেরামত, ইঞ্জিন আমদানি ছাড়াও সম্প্রতি চীন থেকে ২০টি ডেমু ট্রেন আমদানি এবং ৩৮টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

রেলওয়েকে মানুষের দোরগড়ায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৫৭২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন চলছে। এরমধ্যে তারাকান্দি হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। খুলনা হতে মংলা পর্যন্ত নতুন ৬৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও এলাইনমেন্ট নির্ধারণ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজও সম্পন্নপ্রায়।

কয়েক বছর আগে জনকণ্ঠই রিপোর্ট করেছিল যে, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেল যোগাযোগ আরও আধুনিক করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চালু করা হবে হাইস্পীড ট্রেন বা দ্রুতগতিসম্পন্ন ট্রেন। দেশবাসী এ ব্যাপারে অগ্রগতি দেখার জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে। এছাড়া আমাদের প্রত্যাশা কেবল পাবনা এলাকায় নয়, দেশের দুর্গম কিছু এলাকায়ও বর্তমান সরকারের আমলেই রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। খাল-বিল-নদীনালার জেলা বরিশালে অনুরূপ কার্যক্রম গৃহীত হবে। এটা করা গেলে সত্যিকারের স্বপ্নপূরণ হবে দেশের রেলওয়ে খাতে।

সুত্র:জনকন্ঠ,১৭.১২.১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.