শিরোনাম

১০ বছর ধরে ঝুলছে রেলের ২০০ কোচ কেনার প্রকল্প

১০ বছর ধরে ঝুলছে রেলের ২০০ কোচ কেনার প্রকল্প

ইসমাইলআলীসরবরাহকারীর ঋণে (টেন্ডারার্স ফাইন্যান্সিং) ২০০টি মিটারগেজ কোচ কেনায় ২০১১ সালে প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয় চীনের সিআরআরসি সিফ্যান কোম্পানি লিমিটেড। যদিও কোম্পানির সক্ষমতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। আর কোচগুলো সরবরাহে কঠিন শর্তে ঋণ দেবে চীনের আরেক কোম্পানি। তবে নানা জটিলতায় ১০ বছর ধরে ঝুলছে কোচগুলো কেনার প্রকল্পটি।

এদিকে নামসর্বস্ব এ কোম্পানিটির সক্ষমতা নিয়ে গত বছর প্রশ্ন তোলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি। এজন্য কোম্পানিটির সক্ষমতা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছিল ইআরডি। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও করোনার কারণে তা শুরু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ঋণ চুক্তিও সই হয়নি। ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্রমতে, টেন্ডারার্স ফাইন্যান্সিংয়ে ২০০ মিটারগেজ কোচ কেনায় বিশেষ অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ২০১১ সালের ২০ জুলাই এ অনুমোদন দেয়া হলেও প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে এর ছয় বছর পর। আর ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল কোচগুলো কেনায় অগ্রিম ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন নেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে বছর ৪ অক্টোবর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের সিআরআর সিসিফ্যান কোম্পানির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যদিও এ নামে কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায়ই কোচগুলো কেনায় অর্থায়নের বিষয়ে অনুমোদন নিতে প্রস্তাবটি পাঠানো হয় ইআরডিতে। তবে অর্থায়নের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের আগে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন ও ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমোদন গ্রহণের সুপারিশ করে ইআরডি। এজন্য ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর প্রকল্পটি একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন নেয়া হয়। আর সে বছর ২১ নভেম্বর ঋণ নেগোসিয়েশন ও ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আবার ইআরডিতে প্রস্তাব পাঠায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে নানা জটিলতা থাকায় ঋণের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি ও ঋণচুক্তির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠায় ইআরডি। এক্ষেত্রে ক্রয় কার্যক্রমটি ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করে এ প্রক্রিয়াটি শুধু রেলওয়ের আলোচ্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মতামত দেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর সিসিজিপি কর্তৃক ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। আর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর কোচগুলো কেনার জন্য বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এর পর প্রায় আড়াই বছর পেরুলেও এখনও ঋণ চুক্তি সই হয়নি। যদিও ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর সরবরাহকারী কোম্পানির নাম নিয়ে আপত্তি তোলে সিপিটিইউ। পরে ২০১৯ সালের ১৫ মে বিষয়টি সিসিজিপিকে জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়।

তথ্যমতে, ২০০ কোচ কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর কোচগুলো কেনায় ঋণ দেবে চীনের ক্রেডিট এগ্রিকোল করপোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। এক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে আট কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ ইউরো। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় মাস মেয়াদি ইউরো আন্তঃব্যাংক অফার রেটের সঙ্গে (ইউরিবর) দুই শতাংশ যোগ করে নির্ধারিত হার। পাশাপাশি ২৫ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ ঋণ প্রতি বছর ছাড় হবে, সেক্ষেত্রে বাকিটার ওপর কমিটমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ঋণের অ্যারেঞ্জমেন্ট ফি দিতে হবে এক দশমিক তিন শতাংশ। আর ১৫ বছর মেয়াদি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়েছে তিন বছর।

ইআরডির দরকষাকষি শেষে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই চিঠি দেয়া হয় ঋণদানকারী কোম্পানি ক্রেডিট এগ্রিকোল করপোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংককে। আর ২০ সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবটি পাঠানো হয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে। পরে তা অনুমোদন করে কমিটি। তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত দেয় অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি।

প্রথমত, ঋণচুক্তি সইয়ের আগে সরবরাহকারী কোম্পানির মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যেসব দেশে তাদের তৈরি যাত্রীবাহী কোচ সরবরাহ করেছে, সেসব দেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে হবে। তারা কোম্পানিটির সরবরাহকৃত কোচের গুণগত মান ও কর্মদক্ষতা যাচাই করবে। পাশাপাশি কোম্পানিটির সক্ষমতাও যাচাই করবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

যদিও করোনার জন্য চীনে বা সরবরাহকারীর পণ্য আমদানিকারক কোনো দেশে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়নি বলে গত ১১ নভেম্বর জানায় রেলওয়ে। এক্ষেত্রে শর্তটি প্রমার্জনার জন্য ৩০ ডিসেম্বর ইআরডি তথ্য চায়। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এ-সংক্রান্ত বৈঠকে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা এবং দ্রুত ঋণ চুক্তি সইয়ের উদ্যোগ নেয়ার বিষয় উল্লেখযোগ্য।

জানতে চাইলে ২০০ মিটারগেজ কোচ কেনা প্রকল্পটির পরিচালক মৃণাল কান্তি বণিক জানান, অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের ভিত্তিতে কোচগুলোর সরবরাহকারী কোম্পানিটির সক্ষমতা যাচাইয়ে প্রতিনিধিদল গঠন করা হচ্ছে। শিগগিরই তারা কাজ শুরু করবে।

সূত্র:মেয়ার বিজ, এপ্রিল ৩, ২০২১


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.