নিউজ ডেস্ক :
বড় আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আজ থেকে খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথমেই চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
তবে ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলস্টেশনটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েই যাচ্ছে। বিশেষ করে প্লাটফর্মটি বেশ নিচু হওয়ায় যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে ওঠানামা করতে হবে। তাছাড়া স্টেশন নির্মাণে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন সচেতন নাগরিকরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিলে এ স্টেশনের কাজ শুরু হয়। পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর ফলে ব্যয়ও বেড়ে যায়। অবশেষে গত অক্টোবরে কাজ শেষ হয়।
সূত্র আরো জানায়, কাজ শুরুর দিকে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভারহেড ট্যাংকি যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা যুক্ত হয়। এর মধ্যে নকশায় ত্রুটির কারণে নির্মাণাধীন ২ নম্বর প্লাটফর্মের ছাদে ফাটল দেখা দেয়। পরে নকশাকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্লাটফর্মের ছাদের দুই দিকে নতুন করে বিম নির্মাণ করা হয়। পরিবর্তন আনা হয় নকশায়ও।
রেলস্টেশনটিতে তিনতলা স্টেশন ভবন, ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্লাটফর্ম, ৭৮৪ বর্গমিটারের একটি লিংক করিডোর, সীমানা প্রাচীর, সুবিশাল গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত রয়েছে। এটির প্রথম তলায় স্টেশন ভবনে থাকছে ছয়টি টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম ও সহকারী স্টেশন মাস্টারের রুম। দ্বিতীয় তলায় স্টেশন মাস্টারের রুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ওয়েটিং রুম, ফাস্টফুড এবং রেল কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা কক্ষ। তৃতীয় তলায় রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ। একসঙ্গে ছয়টি ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ ও বের হতে পারবে। স্টেশন চত্বরে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান।
এটি চালু হলে খুলনার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ আরো সহজ হবে। সেসঙ্গে ভারতের যাত্রীদের খুলনা স্টেশনেই ইমিগ্রেশন ও চেকিংসহ সুবিধা দেয়া যাবে। প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।
রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রিয়াদ আহমেদ বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৮টায় স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে চিত্রা এক্সপ্রেস। প্রথম ট্রেনযাত্রায় উপস্থিত থাকবেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মো. মজিবর রহমান।
আনুষঙ্গিক মালপত্র আনা ও কম্পিউটার ব্যবস্থা স্থাপনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন খুলনার স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার।
এদিকে রেল স্টেশনের প্লাটফর্ম নিচু হওয়ায় এটি সংস্কারের জন্য এর আগে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, কাজ চলার সময় কর্মকর্তাদের বারবার বলেছি, ট্রেনের বগি ও প্লাটফর্ম যাতে সমান থাকে। কিন্তু কোনো দাবিই মানা হয়নি। প্লাটফর্ম নিচু হওয়ায় চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ থেকেই যাবে।
সংস্কারের সুযোগ আছে কিনা, জানতে চাইলে খুলনা আধুনিক রেলস্টেশনের দায়িত্বরত রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের আইন অনুযায়ী। যদি স্টেশনে কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে কমপক্ষে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
সুত্র:বণিক বার্তা ,নভেম্বর ২৫, ২০১৮