শিরোনাম

বার্ধক্যে ধুঁকছে রেল: আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে অধিকাংশ ইঞ্জিন-কোচের

বার্ধক্যে ধুঁকছে রেল: আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে অধিকাংশ ইঞ্জিন-কোচের

ইসমাইল আলী: রেলের উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করেছে সরকার। এর পর পাঁচ বছরে ২০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়। তবে এ সময় রেলের দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। এতে একদিকে বাড়েনি রেলপথ, অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইঞ্জিন-কোচও যুক্ত হয়নি। অথচ অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) পেরিয়ে গেছে অধিকাংশ ইঞ্জিন-কোচের। ফলে বার্ধক্যে ধুঁকছে রেলওয়ে।

সম্প্রতি রেলওয়ের রোলিং স্টকের সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রণয়নকৃত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে রেলওয়ের ৬৮ শতাংশ ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। আর যাত্রীবাহী কোচের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে ৪৬ শতাংশের। এ ছাড়া ৪৫ শতাংশ পণ্যবাহী ওয়াগনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এর বাইরে রিলিফ ট্রেনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে ৭১ শতাংশের।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে রেলওয়ের বহরে ইঞ্জিন রয়েছে ২৭৮টি। এর মধ্যে মিটারগেজ ইঞ্জিন রয়েছে ১৮৪ ও ব্রডগেজ ৯৪টি। ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা ২০ বছর। এ ধরনের ইঞ্জিন রয়েছে ৮৮টি, যার মধ্যে ৪৯টি মিটার গেজ ও ৩৯টি ব্রডগেজ। বাকিগুলোর মধ্যে ৩৭টি আয়ুষ্কাল ২১-৩০ বছরের মধ্যে। ৩১-৪০ বছরের মধ্যে রয়েছে আরও ৬০টি আর ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে রয়েছে ৯৩টি ইঞ্জিন। সব মিলিয়ে ১৯০টি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে।

বর্তমান সরকারের আমলে ২০টি মিটার গেজ ও ২৬টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন নিয়মিতই বিকল হচ্ছে যাত্রাপথে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

এদিকে রেলওয়ের বহরে যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে এক হাজার ৬৫৬টির। এর মধ্যে মিটারগেজ কোচ রয়েছে এক হাজার ২১৮টি ও ব্রডগেজ ৪৩৮টি। সাধারণ কোচের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ৩৫ বছর। এ মেয়াদের মধ্যে ৮৯২টি কোচ রয়েছে। এসব কোচের মধ্যে ৬২৬টি মিটারগেজ ও ২৬৬টি ব্রডগেজ কোচের আয়ুষ্কাল রয়েছে। আর মেয়াদোত্তীর্ণ মিটারগেজ কোচ রয়েছে ৫৯২ ও ব্রডগেজ ১৭২টি।

বর্তমান সরকারের আমলে কয়েক দফা চেষ্টা করেও কোচ কেনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। তবে বহু চেষ্টার পর গত বছর ভারত থেকে ১২০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়। আর ইন্দোনেশিয়া থেকে কেনা হয় ১০০ মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ। পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব কোচ নিয়মিতই মেরামত করতে হয় রেলওয়েকে। এরপরও মাঝে মাঝে স্প্রিং বসে যাওয়ায় যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়।

এর বাইরে পণ্য পরিবহনে রেলওয়ের ওয়াগন রয়েছে আট হাজার ৬৮০টি। এর মধ্যে ছয় হাজার ৮৫০টি মিটারগেজ ও এক হাজার ৮৩০টি ব্রডগেজ। পণ্যবাহী এসব ওয়াগনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ৪৫ বছর। এ আয়ুষ্কালের মধ্যে রয়েছে চার হাজার ৭৪১টি ওয়াগন। অর্থাৎ তিন হাজার ৯৩৯টি বা ৪৫ শতাংশ ওয়াগনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে তিন হাজার ২৯৯টি মিটারগেজ ও ৬৪০টি ব্রডগেজ ওয়াগন রয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে তেলবাহী ২৪৬টি ও পণ্যবাহী ২২০টি ওয়াগন কেনা হয়। আর পুরোনো ওয়াগনে মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে পণ্যবাহী ট্রেন। এ ছাড়া প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে তেলবাহী ওয়াগনও।

এদিকে দুর্ঘটনাকবলিত পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন উদ্ধারে ক্রেন রয়েছে ১৪টি। এগুলোর নয়টি মিটারগেজ ও পাঁচটি ব্রডগেজ। এর মধ্যে ১০টির আয়ুষ্কাল (২০ বছর) পেরিয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের সময় কেনা একটি ক্রেন ঠিকমতো কাজ করলেও বাকিগুলো দিয়ে উদ্ধারকাজ অনেক সময় বিঘিœত হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক বছরে রেলওয়ের উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করা হলেও ইঞ্জিন-কোচ কেনা হয়েছে অনেক কম। কোচ কেনার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যায়নি। ৭০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্পটিও পাঁচ বছরে কেনা যায়নি। তবে আগামী কয়েক বছরে বেশকিছু ইঞ্জিন ও কোচ কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে রেলের চেহারা বদলে যাবে।

তথ্যমতে, রেলওয়ে খাতের উন্নয়নে চলতি অর্থবছর সংশোধিত বরাদ্দ রয়েছে নয় হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় করা হয় তিন হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিন হাজার ১৫৮ কোটি, ২০৩-১৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৮৫৮ কোটি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুই হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আশানুরূপ ফল না মিললেও আগামী অর্থবছরের জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে ইঞ্জিন-কোচ কেনার ধীরগতির পাশাপাশি নতুন রেলপথ নির্মাণেও অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয় গঠনের সময় সারা দেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। গত পাঁচ বছরে নতুন এক কিলোমিটার রেলপথও যুক্ত হয়নি। ফলে এখনও সারা দেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৮৭৭ কিলেমিটারই রয়ে গেছে। এ সময় শুধু পুরোনো কিছু রেলপথ সংস্কার করা হয়েছে।

সুত্র:জুন ১০, ২০১৭,শেয়ার বিজ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.